দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
Dec 23, 2025 - 13:10
 0  10
দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে বিশাল বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে, বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে হাইকমিশনের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা চালায়। নিরাপত্তাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন’ এবং ‘ময়মনসিংহে দিপু চন্দ্র দাস নামে এক হিন্দু যুবককে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে’ নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে এই বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) ও বজরং দলের ডাকে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুরো এলাকা তিন স্তরের ব্যারিকেডে ঘিরে রাখা হয়েছে এবং সেখানে পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। দূতাবাসের সামনে ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে স্লোগান দিতে দেখা গেছে বিক্ষোভকারীদের।

এ ধরনের ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। গত ২০ ডিসেম্বর রাতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের গেটে একদল লোক বিক্ষোভ করে। সে সময় দিল্লিতে বাংলাদেশের প্রেস মিনিস্টার মো. ফয়সাল মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শনিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে পৌনে ৯টার মধ্যে তিনটি গাড়িতে করে কিছু লোক বাংলাদেশ ভবনের গেটে এসে চিৎকার করে। তারা বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে হিন্দুদের নিরাপত্তার দাবি এবং হাইকমিশনারকে ধরার মতো বক্তব্য দেয়। কিছুক্ষণ পর তারা স্লোগান দিয়ে চলে যায়।’

পরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে ২০ ডিসেম্বর বিক্ষোভের বিষয়ে বাংলাদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদকে ‘বিভ্রান্তিকর প্রচারণা’ বলে আখ্যা দেয় ভারত। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল ২১ ডিসেম্বর এক বিবৃতিতে দাবি করেন, ওই দিন মাত্র ২০–২৫ জন যুবক সেখানে জড়ো হয়েছিল এবং তারা কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টি করেনি।

রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘বিক্ষোভকারীরা হাইকমিশনের নিরাপত্তাবেষ্টনী ভাঙার চেষ্টা করেনি এবং পরিস্থিতিও নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি।’

তবে ভারতের ওই বক্তব্য দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে কূটনৈতিকভাবে অত্যন্ত সুরক্ষিত এলাকায় কীভাবে বিক্ষোভকারীরা প্রবেশ করতে পারল, তা নিয়ে গুরুতর নিরাপত্তা ঘাটতির প্রশ্ন তোলে ঢাকা।

২১ ডিসেম্বর বিকেলে সাংবাদিকদের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘ভারতের প্রেস নোট আমরা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। বিষয়টি এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যেন এটি খুবই সাধারণ ঘটনা; কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। বাংলাদেশ মিশন একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল ও সুরক্ষিত কূটনৈতিক অঞ্চলের ভেতরে অবস্থিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভারতের প্রেস নোটে ঘটনাটি অতি সরলীকরণ করা হয়েছে। প্রশ্ন হলো—২৫ থেকে ৩০ জনের একটি দল, যাদের উগ্র হিন্দু সংগঠনের সদস্য হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে, কীভাবে অনুমতি ছাড়া এমন সুরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ করতে পারল?’

ঘটনাটি ঘিরে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা ও উদ্বেগ অব্যাহত রয়েছে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow