রুমার পান্তলায় জোত পারমিটের আড়ালে ভয়াবহ বন ধ্বংস
সাঙ্গু নদীর দুই তীরে সারিবদ্ধভাবে স্তূপ করে রাখা হাজার হাজার ঘনফুট কাঠ। নৌপথে পাচারের অপেক্ষায় সাজানো এসব কাঠের স্তূপ যেন রুমার গালেঙ্গ্যা ইউনিয়নের পান্তলা মৌজায় চলমান বন ধ্বংসের নির্মম চিত্র তুলে ধরে। জোত পারমিটের সুযোগ নিয়ে একটি প্রভাবশালী চক্র দীর্ঘদিন ধরেই নির্বিচারে পাহাড়ের গাছ কেটে উজাড় করছে—অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাঙ্গু নদীর উজানে পান্তলা পাড়ার ঘাট পেরিয়ে সেপ্রু মুখ এলাকায় তুমুল ব্যস্ততা। নদীর ধারে তৈরি হচ্ছে বিশাল কাঠের চালি। সেখানে কাজ করছেন সাতকানিয়া–খাগরিয়া এলাকার নুরুল আলম (৬৫), মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন (৪২), মোহাম্মদ নাছির (৫৬)সহ আরও আটজন শ্রমিক।
শ্রমিকদের দাবি, তারা মো. জাহেদ মাঝির অধীনে প্রায় দেড় মাস ধরে প্রতিজন ১৫–১৬ হাজার টাকা বেতনে কাজ করছেন। দেলোয়ার বলেন, “আমরা জাহেদ মাঝির লোক। খাবার–থাকার সব ব্যবস্থা উনিই করেন।”
মাঝি জাহেদ জানান, বান্দরবানের ব্যবসায়ী কাউছার সদাগরের কাঠ নদীতে নামানোর প্রস্তুতি চলছে। শ্রমিক নিয়োগ থেকে শুরু করে পুরো ব্যবস্থাপনাই কাউছারের সঙ্গে সমন্বয় করে করা হচ্ছে।
স্থানীয়দের ক্ষোভ
গালেঙ্গ্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেনরত ম্রো বলেন, “জোত পারমিট নেওয়া হয় এক স্থানের নামে, কিন্তু গাছ কাটা হয় সম্পূর্ণ অন্য এলাকা থেকে। এতে পাহাড়ি ঝিরিগুলোর পানি উৎস শুকিয়ে গেছে, ন্যাড়া হয়ে পড়ছে পাহাড়। কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না।”
নুমলাই হেডম্যান পাড়ার বাসিন্দা লংরুম ম্রো (৪২) জানান, তার নামে কোনো বন্দোবস্তি জমি না থাকলেও ‘কামাল’ নামের একজন ব্যক্তি তাদের কিছু গাছ কিনে নিয়ে গেছে। স্থানীয়রা বলছেন, ব্যবসায়ী কাউছারের পক্ষে এই অঞ্চলে কাঠ কেনা–কাটা ও পরিবহনের দায়িত্বে রয়েছে কামাল।
সরেজমিনে দেখা যায়, সাঙ্গু নদীর উভয় তীরে বিশাল পরিসরে কাঠের চালি প্রস্তুত। যেকোনো সময় নৌপথে পাচার করার মতোভাবে কাঠগুলো বাঁশ দিয়ে বেঁধে সাজানো।
বন বিভাগের ব্যাখ্যা
রুমা রেঞ্জ কর্মকর্তা রিয়াজ রহমান বলেন, “গালেঙ্গ্যা ইউনিয়নে কয়েকটি অনুমোদিত জোত পারমিট চলমান রয়েছে। এগুলো আগের রেঞ্জারের সময়ে অনুমোদিত। কোন মৌজায় কার নামে অনুমোদন হয়েছে—তা এখনই নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়।”
সাবেক রেঞ্জার মো. মুনতাসীর জানান, “পান্তলা পাড়া থেকে তিনজন ব্যক্তির নামে জোত পারমিট দেওয়া হয়েছিল। কাউছারের জোত কোনটির নামে হয়েছে, কাগজপত্র না দেখে বলা কঠিন।”
পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কা
স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশ সচেতন নাগরিকদের অভিযোগ, জোত পারমিটকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে চক্রটি পারমিট–সীমার বাইরে বিশাল এলাকা জুড়ে গাছ কাটছে। এতে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো পুরোনো বৃক্ষ দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে, পাহাড় উজাড় হচ্ছে, ঝিরি–ঝরনার পানি ধারা কমে যাচ্ছে। হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য।
তারা অবিলম্বে জোত পারমিট পুনঃমূল্যায়ন, কাঠ পাচার দমন এবং বন রক্ষায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
What's Your Reaction?
শৈহ্লাচিং মার্মা, রুমা (বান্দরবান) প্রতিনিধি