বিএনপির কার্যালয়ের সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে প্রবাসীর জমি দখল

জালিস মাহমুদ, স্টাফ রিপোর্টার, পিরোজপুরঃ
Nov 5, 2025 - 12:30
 0  7
বিএনপির কার্যালয়ের সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে প্রবাসীর জমি দখল

পিরোজপুরে বিএনপি কার্যালয়ের সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে এক প্রবাসী ও তার স্ত্রীর সম্পত্তি দখলের অভিযোগ উঠেছে সিদ্দিকুর রহমান হাওলাদার নামের এক ওয়ার্ড বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। পিরোজপুর সদর উপজেলার কলাখালী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে জমি দখলের এ ঘটনা ঘটে।

প্রবাসীর মেঝ ভাই তোবারেক কাজী জানান, গত ১ মাস পূর্বে স্কটল্যান্ড প্রবাসী সেজ ভাই কাজী বাহাদুর ও তার স্ত্রী নুসরাত জাহানের নামে সদর উপজেলার কলাখালী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে ৪৩ শতক জমি ক্রয় করেন। গত ১ সপ্তাহ আগে ওই এলাকার বাসিন্দা এবং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান হাওলাদার ওই জমি তার দাবি করে ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির কার্যালয়ের একটি সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে ওই জমি দখলে নেন। এ সময় জমি দখলে বাঁধা দিলে তাদের নানানভাবে হুমকি ধামকি দেন ওই ওয়ার্ড বিএনপি নেতা। 

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী কাজী বাহাদুর মুঠো ফোনে বলেন, " আমি ও আমার স্ত্রী নুসরাত জাহান ক্রয় সূত্রে এই জমির মালিক। এখানে আমার ক্রয় করা ১৩.৮৫ শতাংশ, আমার শাশুড়ির ৪. ৬১ শতাংশ এবং মামা শ্বশুরের ৯.২৩ শতাংশ জমি ওখানে আছে। আমি এই জমিটি ক্রয়ের সাথে সাথে সিদ্দিকুর রহমান হাওলাদার বিএনপির কার্যালয়ের ব্যানার সাঁটিয়ে দেয়। কলাখালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি চাঁন সরদার ও সাধারণ সম্পাদক এনাম মৃধাকে বিষয়টি অবহিত করি। উভয়ই  সিদ্দিকুর রহমান হাওলাদারকে নিষেধ করা সত্ত্বেও  তিনি কোন কর্ণপাত করেনি। বিএনপির কারো মতামত না নিয়েই তিনি ব্যানার সাঁটিয়ে দিয়েছে। সদর থানার ওসি মো. রবিউল ইসলামকে স্কটল্যান্ড থেকে ফোনে বিষয়টি জানিয়েছি। ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছিলেন কিন্তু অদ্যাবধি কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। 

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সিদ্দিকুর রহমান হাওলাদার জনকণ্ঠকে মনগড়া বক্তব্য দিয়ে বলেন, "এটা আমার পিতার ক্রয়কৃত সম্পত্তি। এ জন্য আমি এই সাইনবোর্ড সাঁটিয়েছি। বিএনপির সাইনবোর্ড টানানোর ব্যাপারে দলের অনুমতি নিয়েছেন কি-না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন- দলীয় সাইনবোর্ড টানাতে অনুমতি লাগবে কেন? আমরা গত ১৭ বছর বাহিরে বের হতে পারি নাই। এখন একটা কার্যালয় বানিয়েছি। আমার কার্যালয়ের ব্যানার কারা যেন ছিঁড়ে ফেলছে। ওই স্কটল্যান্ড প্রবাসী সহ সবার বিরুদ্ধে আমি মামলা দায়ের করবো। "

এবিষয়ে কলাখালী ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ডালিম ডাকুয়া বলেন, "অভিযুক্ত সিদ্দিকুর রহমান ডাকুয়া একজন ভূমি দস্যু। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চাঁন ডাকুয়ার সঙ্গে মিলেমিশে জমি দখল ও নানাবিধ অপকর্মে লিপ্ত ছিলো।"


এ বিষয়ে কলাখালী ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক বলেন, "দলীয় কার্যালয় বা ব্যানার সাঁটানোর জন্য উর্ধতন নেতৃবৃন্দের অনুমতি নিতে হয়। অভিযুক্ত সিদ্দিকুর রহমান হাওলাদার কোন অনুমতি নেয়নি। তিনি একজন ভূমিদস্যু। কলাখালী ইউনিয়নের সভাপতি সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান হাওলাদার এবং ওই ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক সোহেল শেখের অত্যাচারে সবাই অতিষ্ঠ। তারা নানাবিধ অপকর্মে লিপ্ত। অভিযুক্ত সিদ্দিকুর রহমান হাওলাদার এর বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

কলাখালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি গিয়াসউদ্দিন সরদার চাঁন বলেন, "বিএনপির সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে এক ব্যক্তির জমি দখলের অভিযোগ পেয়েছি। আমি তাকে ওই সাইনবোর্ড নামাতে বলেছি। পরে সাইনবোর্ডটি নামিয়েছে কি-না তা জানিনা। 

পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক নজরুল ইসলাম খান বলেন, ওকে সাইনবোর্ড টানাতে বলছে কে? ওরে তো পিটানো দরকার। এ বিষয়ে আমি এখনি ব্যাবস্থা নিচ্ছি।

পিরোজপুর সদর থানার ওসি রবিউল ইসলাম বলেন, "আমি অভিযুক্ত সিদ্দিকুর রহমান হাওলাদাকে ওই জায়গার কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলেছি। কাগজ পত্র পর্যালোচনা করে ওই জমির মালিকানা নিশ্চিত হওয়ার পরে যদি সে অবৈধভাবে দখল করে থাকে তাহলে  আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow