চাকরি ছেড়েছিলেন ৬ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে, আজ তিনি মাগুরার 'বৃক্ষ-সম্রাট'

বেতনের চাকরির নিশ্চিন্ত জীবন পায়ে ঠেলে, পকেটে মাত্র ৬ হাজার টাকা আর বুকে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে যে পথচলা শুরু হয়েছিল, ১৩ বছর পর তা রূপ নিয়েছে এক বিশাল 'সবুজ সাম্রাজ্যে'। এ যেন এক সিনেমার গল্প! বলছি মাগুরার মহম্মদপুরের যুবক মোঃ হুমায়ূন আহমেদের কথা, যিনি আজ শুধু একজন সফল নার্সারী ব্যবসায়ী নন, তিনি শত শত তরুণের অনুপ্রেরণার বাতিঘর। তার হাতে গড়া 'মিনহা নার্সারী' এখন বিরল ও বিদেশি গাছের এক জীবন্ত জাদুঘর, যার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে।
মহম্মদপুর উপজেলার নিখড়া গ্রামের আব্দুল হামিদ মোল্লার জ্যেষ্ঠ পুত্র হুমায়ূন আহমেদ। ফুলের প্রতি তীব্র ভালোবাসা থেকেই একদিন চাকরির মায়া ত্যাগ করেন। বাড়ির উঠোনে অল্প কিছু ফুলের চারা দিয়ে যে যাত্রার শুরু, তা এখন রূপ নিয়েছে চারটি বিশাল নার্সারীতে। একসময় ভ্যানে করে স্কুল-কলেজ ও হাটের সামনে চারা বিক্রি করলেও, এখন তার নার্সারীর খ্যাতি দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকেও মানুষকে টেনে আনছে।
"গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান"—এই স্লোগানকে ধারণ করে হুমায়ূনের নার্সারী যেন এক জীবন্ত বিস্ময়। এখানে রয়েছে ৩৯৬ রকমের দেশি-বিদেশি গাছের এক বিশাল সংগ্রহ। অ্যাভোকাডো, রামবুটান, পার্সিমন থেকে শুরু করে ক্যান্সার-প্রতিরোধক হিসেবে পরিচিত করসল ও ননী ফলের চারাও রয়েছে তার সংগ্রহে।
রয়েছে ৪-৫ কেজি ওজনের ব্রুনাই কিং আম, ৫ কেজি ওজনের বেল, আঠা-বিহীন কাঁঠাল, থাই ব্যানানা কিং আম, মিষ্টি তেঁতুল এবং টাল-ছাড়া শিম ও শসার মতো সবজির চারা। তার সংগ্রহে থাকা আজওয়া, মরিয়মসহ বিভিন্ন জাতের সৌদি খেজুরের চারাও ক্রেতাদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়।
১৩ বছর আগে মাত্র ছয় হাজার টাকা হাতে নিয়ে নার্সারীর ব্যবসায় ঝুঁকেছিলেন হুমায়ূন। তার এই কঠোর পরিশ্রম বৃথা যায়নি। পরপর তিন বছর (২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮) জেলা কৃষি মেলায় প্রথম পুরস্কার অর্জন তার এই যাত্রার এক বড় স্বীকৃতি।
হুমায়ূন আহমেদ জানান, বর্তমানে চারটি নার্সারী পরিচালনা ও কর্মচারীদের বেতনসহ প্রতি মাসে তার খরচ হয় প্রায় এক লক্ষ টাকা। সব খরচ বাদ দিয়েও তিনি একটি সম্মানজনক আয় করেন, যা দিয়ে ৮ সদস্যের পরিবার স্বাচ্ছন্দ্যে চলে।
পরিশ্রম ও স্বপ্নের প্রতি ভালোবাসা যে মানুষকে সফলতার শীর্ষে নিয়ে যেতে পারে, তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মাগুরার হুমায়ূন আহমেদ। তার নার্সারী এখন শুধু চারা বিক্রির কেন্দ্র নয়, এটি একটি অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছে বহু তরুণ উদ্যোক্তার জন্য।
What's Your Reaction?






