পরিত্যক্ত মিরার জীবনে আলো এনে দিল এক অনাথ ছবি: পাঁচ বছর ধরে সহায়তা করছেন অজানা প্রবাসী

একটি মুহূর্ত। একটি ছবি। আর সেটিই হয়ে ওঠে একজন পরিত্যক্ত ও প্রতিবন্ধী নারীর জীবনের মোড় ঘোরানো গল্পের সূচনা।
ঘটনাটি পাঁচ বছর আগের। খোকসার সাংবাদিক সমাজের অন্যতম পথপ্রদর্শক, দৈনিক সমকালের প্রতিনিধি মুন্সি লিটন প্রতিদিনের মতো পেশাগত কাজে যাচ্ছিলেন। খোকসা উপজেলার বড়ইচাড়া গ্রাম সংলগ্ন পথে দেখতে পান—একজন প্রতিবন্ধী নারীকে রশি দিয়ে বেঁধে নিয়ে যাচ্ছে এক পুরুষ। কাছে গিয়ে তিনি বুঝতে পারেন, মেয়েটি মিরা, আর তাকে বেঁধে নিয়ে যাচ্ছেন তার সাবেক স্বামী।
সাংবাদিক মুন্সি লিটন প্রশ্ন করেন, “কেন এমন করছেন?” উত্তরে সাবেক স্বামী জানান, “আমার সাইকেল মেরামতের দোকানের ক্যাশ বাক্স থেকে ৮০০ টাকা চুরি করেছে, তাই বেঁধে নিয়ে যাচ্ছি।”
সেই মুহূর্তে তোলা একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে দৈনিক সমকাল, আনন্দবাজারসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। সংবাদ পড়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত এক বাংলাদেশি প্রবাসী মিরার জীবনের এই নির্মম বাস্তবতা দেখে আবেগে আপ্লুত হন।
তিনি আনন্দবাজার পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিক মুন্সি লিটনের নম্বর খুঁজে বের করে যোগাযোগ করেন এবং বলেন, “আমি প্রতিবছর মিরার জন্য এক হাজার টাকা পাঠাতে চাই।”
সেই থেকে প্রতি বছরই পৌঁছে যাচ্ছে সেই সহায়তা। এবার ঈদুল আযহায় সেই অচেনা প্রবাসী সহায়তার পরিমাণ বাড়িয়ে পাঠিয়েছেন ১ হাজার ৫০০ টাকা।
মজার বিষয়, আজও কেউ জানে না সেই প্রবাসীর নাম বা পরিচয়—না সাংবাদিক, না মিরার পরিবার। তবু পাঁচ বছর ধরে টিকে আছে এই মানবিক সেতুবন্ধন।
এই গল্প কেবল একটি মেয়ের বেঁচে থাকার গল্প নয়—এটি আশার, দায়িত্ববোধের, আর অচেনা কারও নীরব ভালোবাসার গল্প। এটি প্রমাণ করে, সমাজে এখনও মানবতা বেঁচে আছে।
What's Your Reaction?






