কুবিতে গণঅভ্যুত্থান উদযাপনে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের রহস্যজনক অনুপস্থিতি

আলী আকবর শুভ, কুবি প্রতিনিধি, কুমিল্লাঃ
Aug 5, 2025 - 23:58
 0  1
কুবিতে গণঅভ্যুত্থান উদযাপনে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের রহস্যজনক অনুপস্থিতি

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান দিবস-২০২৫ উপলক্ষে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) দিনব্যাপী নানা আয়োজনে উদযাপিত হয়েছে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি’। কর্মসূচিতে উপাচার্য, উপ-উপাচার্যসহ প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও শিক্ষকরা উপস্থিত থাকলেও আওয়ামী লীগ পন্থী অধিকাংশ শিক্ষক অনুপস্থিত ছিলেন।

মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে আলোচনা সভা, সেমিনার, মিলাদ মাহফিল, র‍্যালি, চিত্র ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শনের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করা হয়।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে যে সকল কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে, সেগুলোর প্রায় সবকটিতে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের তেমন উপস্থিতি ছিল না বলে অভিযোগ রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, এসব শিক্ষক এখনো ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান’ ধারণ করতে পারছেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, “জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ছিল স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় বিএনপি আমলে প্রতিষ্ঠিত হলেও অধিকাংশ শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছেন আওয়ামী লীগ শাসনামলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু শিক্ষক এখনো নিজেদের মানসিকভাবে বদলাতে পারেননি। কেউ কেউ ভালো হওয়ার মুখোশ পরে থাকলেও সুযোগ পেলে আবারও স্বৈরাচারী আচরণে ফিরবেন। এতদিনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা এসব শিক্ষকের পক্ষে হঠাৎ করে ‘জুলাই অভ্যুত্থান’কে অন্তর থেকে গ্রহণ করা স্বাভাবিক ব্যাপার নয়।”

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাবেক সভাপতি ও  শিক্ষক সমিতির সর্বশেষ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, “আমি আজ বিভাগে ছিলাম, তাই আলোচনা সভায় থাকতে পারিনি। বাসায় চলে আসছিলাম। আমরা কেন জুলাই অভ্যুত্থান অস্বীকার করবো? এখানে প্রতিটি কর্মসূচির দিন কেউ না কেউ ব্যস্ততার কারণে থাকতে পারে না। এটা কোনো আদর্শের বিষয় নয়।’

বঙ্গবন্ধু পরিষদ আরেক অংশের সভাপতি ও সাবেক প্রক্টর ড. কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, “জুলাইকে ধারণ করা বা না করার মতো কোনো বিষয় নেই। আমি দুদিন ধরে অসুস্থ, সে কারণেই যেতে পারিনি।”

বঙ্গবন্ধু পরিষদ-২০২১ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী বলেন, “আমি অসুস্থতার কারণে যেতে পারিনি। আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা কি জুলাইকে ধারণ করতে পারছেন না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এরকম হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। গত জুলাই মাসে যখন ছাত্রদের সমস্যা হয়েছিল তখন আমরা তাদেরকে খাবার ওষুধ ও আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছি। অনেক সমস্যাগ্রস্থ ছাত্রকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছি।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “আমি তো সবাইকে চিনিনা, আমি এখানকার শিক্ষক নই। মানুষের মনে কী আছে সেটা আমরা কিভাবে বলবো? মুখে হয়তো বলবে হ্যাঁ, আমরা জুলাই অভ্যুত্থানকে ধারণ করি। তবে কারও মনে হয়তো কষ্ট থাকতে পারে। পূর্বের সরকারের একটি বড় অংশ এখন নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। হয়তো পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে নিজেদের পরিবর্তন করেছে। সুযোগ পেলে হয়তো আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাবেন।’

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow