কর্তৃপক্ষকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শিক্ষিকা উধাও

কবির হোসেন, আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর ) প্রতিনিধিঃ
Aug 31, 2025 - 23:11
 0  26
কর্তৃপক্ষকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শিক্ষিকা উধাও

কোনো ছুটি নেই, নেই কোনো পূর্বানুমতি। এমনকি কর্তৃপক্ষের পাঠানো কারণ দর্শানোর নোটিশও গ্রহণ করছেন না। এভাবেই প্রায় মাসাধিককাল ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার মালা শহীদ আসাদুজ্জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সংগীতা ভৌমিক। তার এই ‘রহস্যজনক’ অনুপস্থিতিতে একদিকে যেমন ভেঙে পড়েছে বিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রম, অন্যদিকে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ।

ঘটনার সূত্রপাত ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে। বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সহকারী শিক্ষক সংগীতা ভৌমিক কোনো প্রকার যোগাযোগ ছাড়াই বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দেন। তার অনুপস্থিতির কারণে নির্দিষ্ট শ্রেণির পাঠদান সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। বার্ষিক পরীক্ষার আগে এমন ঘটনায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা।

শিক্ষিকার এই স্বেচ্ছাচারী আচরণে হতবাক ও ক্ষুব্ধ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রধান শিক্ষক আল হিলাল মোল্যা এ বিষয়ে তীব্র হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “আমরা প্রথমে তার সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। তার ফোন একটানা বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এরপর আমরা ডাকযোগে পর পর তিনবার কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছি, কিন্তু তিনি সেগুলো গ্রহণ না করায় ফেরত এসেছে। একজন শিক্ষিকার এমন আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা ম্যানেজিং কমিটি ও উপজেলা শিক্ষা অফিসকে লিখিতভাবে বিষয়টি জানিয়েছি।”

এদিকে, শিক্ষিকার এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের বিরুদ্ধে নড়েচড়ে বসেছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক অভিযোগ প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে বলেন, “বিনা অনুমতিতে একজন শিক্ষকের এত দীর্ঘ সময় অনুপস্থিত থাকা একটি গুরুতর শৃঙ্খলাভঙ্গ। এটি শিক্ষকতা পেশার নীতিমালার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। আমরা অভিযোগটি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখছি এবং তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

বিষয়টি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রাসেল ইকবাল। তিনি বলেন, “শিক্ষকরা হলেন সমাজ গড়ার কারিগর। তাদের কাছ থেকে এমন অপ্রত্যাশিত আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা ও শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনকে জিম্মি করার কোনো সুযোগ নেই। যেহেতু এটি একটি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, তদন্ত শেষে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বারবার চেষ্টা করেও অভিযুক্ত শিক্ষিকা সংগীতা ভৌমিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ থাকায় তার দীর্ঘ অনুপস্থিতির পেছনের কারণ এখনো অজানা রয়ে গেছে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow