বান্দাইখাড়া কলেজ অধ্যক্ষের দুর্নীতি, সভাপতির পদত্যাগ দাবিতে মানববন্ধন

নওগাঁর আত্রাই উপজেলার বান্দাইখাড়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যাপক আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, যার ফলে কলেজের সভাপতি মোঃ আশরাফুল ইসলাম গেন্দুর পদত্যাগ এবং অধ্যক্ষের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। এই দাবিতে মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বান্দাইখাড়া বাজারে এক ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী বক্তারা অধ্যক্ষ মোঃ আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরেন। এ সকল অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৭ সেপ্টেম্বর কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও ম্যানেজিং কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি মো. মামুনুর রশীদ সিদ্দীক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন সম্পূর্ণ অনিয়মতান্ত্রিকভাবে ম্যানেজিং কমিটিতে তার পছন্দের ব্যক্তি মোঃ আশরাফুল ইসলাম গেন্দুকে সভাপতি হিসেবে মনোনীত করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করেন। এছাড়াও কলেজের মালিকানাধীন দুই একর সতেরো শতক আবাদী জমির ১৯৯৫ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কোনো প্রকার হিসাব দেননি তিনি।
২০২০ সালে কলেজের বেশ কিছু মেহগনি গাছ কেটে ৭৯টি কাঠের গোলা একটি স'মিলে রাখা হয়। অভিযোগ উঠেছে, সেখান থেকে অধ্যক্ষ ও আরও দুজন শিক্ষক মিলে ২৮টি কাঠের গোলা সরিয়ে ফেলেন। এই ঘটনা জানাজানি হলে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয় এবং তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বন কর্মকর্তার মধ্যস্থতায় জরিমানা সাপেক্ষে বিষয়টি নিষ্পত্তি হলেও অবশিষ্ট ৫১টি কাঠের গোলার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মামুনুর রশীদ সিদ্দীক আরও অভিযোগ করেন, কলেজের ভবন নির্মাণে দুর্নীতি, ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে আদায়কৃত বিভিন্ন ফির টাকার অস্বচ্ছতা এবং ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হান্নান আলী সরদারের তিন মাসের বকেয়া বেতন তুলে আত্মসাতের মতো গুরুতর অভিযোগও রয়েছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী শিক্ষক হান্নান আলী সরদার জানান, "আমার তিন মাসের বিল অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন তুলে আত্মসাৎ করেছেন। বিষয়টি তাকে জানানোর পরেও তিনি অস্বীকার করেন। অথচ কলেজের ফাইলে আমার বিল তৈরি করে বেতন উত্তোলনের প্রমাণ রয়েছে, কিন্তু আজও আমি সেই টাকা ফেরত পাইনি।"
এদিকে, অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "নীতিমালা অনুসরণ করেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সভাপতি নির্ধারণ করা হয়েছে, এখানে কোনো অনিয়ম করা হয়নি।"
একই সুরে কথা বলেছেন কলেজের সভাপতি মোঃ আশরাফুল ইসলাম গেন্দু। তিনি বলেন, "সরকারি নীতিমালা মেনেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে সভাপতির অনুমোদন দিয়েছে। কমিটি গঠনে অধ্যক্ষ কোনো অনিয়ম করেননি। আমার এবং অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে এই মানববন্ধন সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক।"
মানববন্ধনে উপস্থিত স্থানীয় বাসিন্দা মো. ইয়াকুব আলী মজনু সরদার বলেন, "শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একটি পবিত্র জায়গা, এখানে দুর্নীতি মেনে নেওয়া যায় না। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো অত্যন্ত গুরুতর। আমরা চাই অবিলম্বে একজন ম্যাজিস্ট্রেট বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে সকল অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা হোক এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।"
উক্ত মানববন্ধনে কলেজের ছাত্র মো. রাকিব, মোঃ শাফিক আহমেদ, মো. হাবিবুর রহমান এবং কলেজের দাতা সদস্যের ছেলে পলাশ চৌধুরীসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন। ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উন্মোচনের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
What's Your Reaction?






