রাজবাড়ীতে সন্তানের অত্যাচারে আশ্রয়হীন মা: সম্পত্তি লিখে নিয়ে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ

রাজবাড়ীর পাংশায় গর্ভধারিণী মায়ের সঙ্গে প্রতারণা করে সম্পত্তি আত্মসাৎ এবং তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার এক হৃদয়বিদারক অভিযোগ উঠেছে তারই ছেলে ও পুত্রবধূর বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী মা ফিরোজা খোন্দকার এখন ন্যায়বিচারের আশায় আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। তার সহায়-সম্বল কেড়ে নিয়ে ছেলে খোন্দকার ফজলে রাব্বী সাগর ও তার স্ত্রী শারমিন সুলতানা মুন্নি তাকে আশ্রয়হীন করে দিয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
ঘটনাটি পাংশা পৌর শহরের মাগুড়াডাঙ্গী গ্রামের। ফিরোজা খোন্দকার জানান, তার ছেলে সাগর প্রতারণার মাধ্যমে তার ৪৩.৫০ শতাংশ জমি নিজের নামে লিখিয়ে নেয়। এরপর থেকেই বিভিন্ন সময়ে তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হতো। সম্প্রতি সেই সম্পত্তি শহরের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে সাগর। এখন নতুন ক্রেতারা তার বসতবাড়ির ঘরবাড়ি ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে, অথচ তিনি কিছুই করতে পারছেন না।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে ফিরোজা খোন্দকার বলেন, "এই জমি আমার। আমার ছেলে আমার সঙ্গে প্রতারণা করে দলিল করেছে। আমি এর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছি। মামলা চলমান থাকা অবস্থায় কীভাবে সে এই বাড়ি বিক্রি করে? যারা জেনেশুনে এই জমি কিনছে, তারাও একদিন ঠকবে।"
তিনি আরও অভিযোগ করেন, তার পুত্রবধূ শারমিন সুলতানা মুন্নিও এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মুন্নির বিভিন্ন অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করায় তাকে প্রায়ই শারীরিক নির্যাতন সহ্য করতে হতো এবং শেষ পর্যন্ত তাকে বাড়ি থেকেই বের করে দেওয়া হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন শ্রমিক ঘর ভাঙার কাজ করছে। এ বিষয়ে ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী আবু সায়েম জানান, সাগরের স্ত্রী মুন্নি তার কাছে সাড়ে তিন লক্ষ টাকায় পাঁচটি ঘর বিক্রি করেছেন। তাই তিনি লোক নিয়ে সেগুলো ভেঙে নিয়ে যাচ্ছেন।
এই গুরুতর অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য খোন্দকার ফজলে রাব্বী সাগর এবং তার স্ত্রী শারমিন সুলতানা মুন্নির বাড়িতে গিয়ে তাদের পাওয়া যায়নি। এমনকি তাদের মুঠোফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।
ফিরোজা খোন্দকারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল কাইয়ুম জানিয়েছেন, "বিষয়টি নিয়ে রাজবাড়ীর জেলা জজ আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয়েছে। মামলা চলাকালীন সম্পত্তি বিক্রি করা সম্পূর্ণ বেআইনি। আমরা আদালতে ন্যায়বিচার প্রত্যাশী।"
পাংশা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, "অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। যেহেতু বিষয়টি বিচারাধীন, আমরা আদালতের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"
বৃদ্ধ বয়সে নিজের সন্তানের এমন অমানবিক আচরণে ফিরোজা খোন্দকার এখন সম্পূর্ণ দিশেহারা। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে নিজের অধিকার ফিরে পেতে এবং একটুখানি আশ্রয়ের জন্য তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ও ন্যায়বিচার কামনা করছেন।
What's Your Reaction?






