শেখ হাসিনা ও সেনা কর্মকর্তাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ আজ
আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ শাসনামলে র্যাবের টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেলে গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার ১০ সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ১৭ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশের দিন আজ মঙ্গলবার নির্ধারিত রয়েছে।
আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ বিষয়ে আদেশ দেবেন। এ আদেশের মাধ্যমে মামলাটিতে আসামিদের বিচার শুরু হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত স্পষ্ট হবে।
এই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট ১৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে গ্রেপ্তার ১০ সেনা কর্মকর্তা হলেন—র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, কর্নেল কে এম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে), র্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম।
শেখ হাসিনা ছাড়া মামলার পলাতক অন্য আসামিরা হলেন—সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক এম খুরশিদ হোসেন, র্যাবের সাবেক ডিজি ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ এবং র্যাবের সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মো. খায়রুল ইসলাম।
গত ১৪ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার তিন আসামির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী হামিদুল মিসবাহ এবং সাতজনের পক্ষে শুনানি করেন তাবারক হোসেন। এ ছাড়া আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী এম হাসান ইমাম, তিনজনের পক্ষে আইনজীবী সুজাদ মিয়া এবং শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবী মো. আমির হোসেন শুনানি করেন।
শুনানিতে প্রত্যেক পক্ষই পৃথক পৃথক যুক্তি (গ্রাউন্ড) উপস্থাপন করে তাঁদের মক্কেলদের অব্যাহতি দাবি করেন। তবে প্রসিকিউশনের পক্ষে প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আবেদন জানান।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে গত রোববার (২১ ডিসেম্বর) আদেশের দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল। যদিও ওই দিন আদেশ দেওয়ার কথা থাকলেও তিন সামরিক আসামির আইনজীবী জানান, কারাগারে আসামিদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ না পাওয়ায় তাঁদের অব্যাহতির আবেদনের শুনানি সম্পূর্ণ হয়নি।
আদালত আইনজীবীর আবেদন মঞ্জুর করে ওই তিন আসামির অব্যাহতির আবেদন শোনেন এবং আদেশের তারিখ দুই দিন পিছিয়ে দেন।
এর আগে ৩ ডিসেম্বর অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি শেষ করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। শুনানিতে তিনি টিএফআই সেলের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন এবং বলেন, গুমের অন্ধকার পেরিয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর পর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট একটি নতুন বাংলাদেশ উদিত হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, গুম হওয়া ব্যক্তিদের ভাগ্য সাধারণত দুইভাবে নির্ধারিত হতো—ভাগ্য ভালো হলে তাঁদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হতো, আর অন্য ক্ষেত্রে সাত-আট বছর গুম করে অজানা স্থানে ফেলে দেওয়া হতো।
চলতি বছরের ২২ অক্টোবর সেনা হেফাজতে থাকা ১০ কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে শুনানি শেষে তাঁদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১। একই সঙ্গে পলাতক আসামিদের হাজির করতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়।
নির্ধারিত সময়ে হাজির না হওয়ায় পলাতক আসামিদের পক্ষে স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ দেন আদালত। এর আগে ৮ অক্টোবর প্রসিকিউশন এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে। অভিযোগ আমলে নিয়ে ট্রাইব্যুনাল ১৭ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করেন।
What's Your Reaction?
অনলাইন ডেস্কঃ