চিৎমরমে লাখো পুণ্যার্থীর অংশগ্রহণে কঠিন চীবর দানোৎসব সম্পন্ন
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ঐতিহ্যবাহী চিৎমরম বৌদ্ধ বিহার মাঠ প্রাঙ্গণে লাখো পুণ্যার্থীর অংশগ্রহণে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব কঠিন চীবর দানোৎসব সম্পন্ন হয়েছে। বিশ্বশান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) দিনব্যাপী এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
চিৎমরম ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ বিহার পরিচালনা কমিটির আয়োজনে ও দায়ক-দায়িকাদের সহযোগিতায় সকালে শুরু হয় বুদ্ধ বন্দনা, বিশ্বশান্তি কামনায় প্রার্থনা, পূজনীয় ভিক্ষু সংঘকে পিণ্ডদান, জাতীয় ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, মঙ্গলাচারণ, বুদ্ধ পূজা, ধর্ম দেশনা, পঞ্চশীল, অষ্টপরিস্কার দান, বুদ্ধমূর্তি দান, সংঘদান, প্রাতঃরাশ ও কল্পতরুসহ নানাবিধ দান কার্যক্রম।
দ্বিতীয় পর্বে বেলা ২টার দিকে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে কঠিন চীবর ও কল্পতরু শোভাযাত্রা মাঠে আনা হয়। এরপর উদ্বোধনী ধর্মীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। সকল প্রাণীর হিতসুখ ও বিশ্বশান্তি কামনায় পঞ্চশীল গ্রহণ, সংঘদান, অষ্টপরিস্কার দান, বুদ্ধমূর্তি দান, কল্পতরু দান ও কঠিন চীবর দান সম্পন্ন করা হয়।
ধর্মসভায় সভাপতিত্ব করেন ঐতিহ্যবাহী চিৎমরম বৌদ্ধ বিহারের পূজনীয় বিহারাধ্যক্ষ ভদন্ত পামোক্ষা মহাথেরো। প্রধান ধর্মদেশক ছিলেন ওয়াগ্গা জনকল্যাণ বৌদ্ধ বিহারের বিহারাধ্যক্ষ ভদন্ত সুমেধানন্দ মহাথেরো এবং বিশেষ ধর্মদেশক ছিলেন চিৎমরম বৌদ্ধ বিহারের ভদন্ত ওয়ানাসারা থের। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব এ্যাডভোকেট হ্লাথোয়াই মারমা ও সাচিংউ মারমা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন রাঙামাটি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ, রাঙামাটি জেলা পরিষদের সদস্য ক্যওশিংমং মারমা, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও কাপ্তাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দিলদার হোসেন, রাঙামাটি জেলা মারমা ঐক্য পরিষদের সভাপতি সাজাইমং মারমা, কাপ্তাই উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক উথোয়াইমং মারমা এবং রাজস্থলী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার নুরুল আমীন চৌধুরীসহ অনেকে।
এ সময় ধর্মগুরু ও অতিথি দায়কদের ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন কঠিন চীবর দানোৎসবের আহ্বায়ক মংসুইপ্রু মারমা।
তিন পার্বত্য জেলা থেকে আগত লাখো বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ দলে দলে অংশ নিয়ে সমবেত প্রার্থনা ও পঞ্চশীল গ্রহণের মাধ্যমে জগতের সকল প্রাণীর হিতসুখ কামনা করেন। ধর্মসভা ও পঞ্চশীল গ্রহণ শেষে চীবর দানের মধ্য দিয়ে “মুক্তির অহিংসা বাণী ছড়িয়ে যাক মানুষে মানুষে, শান্তি ফিরে আসুক ধর্মপ্রাণ বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের জীবনে”—এমন প্রার্থনার মধ্য দিয়ে চিৎমরমের কঠিন চীবর দানোৎসবের সমাপ্তি ঘটে।
What's Your Reaction?
রিপন মারমা, কাপ্তাই প্রতিনিধি, রাঙ্গামাটিঃ