মাত্র ৫০ টাকার জন্য বন্ধুর হাতেই নৃশংসভাবে খুন মাদ্রাসাছাত্র, ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ঘাতক গ্রেপ্তার

মাত্র ৫০ টাকা! এই তুচ্ছ অংকের টাকার জন্যই সহপাঠীর হাতে প্রাণ গেল ১৩ বছরের এক শিশুর। বন্ধুত্বের সম্পর্ক মুহূর্তেই পরিণত হলো নির্মম শত্রুতায়। ক্ষোভের বশে এক কিশোরের হাতে খুন হলো আরেক কিশোর। ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় এই হৃদয়বিদারক ঘটনার পর বস্তাবন্দী লাশ ডোবায় ফেলে দিয়েও শেষরক্ষা হয়নি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করে ঘাতক কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার চান্দড়া নূরানী মাদ্রাসা। নিহত আমির হামজা (১৩) ওই মাদ্রাসার ছাত্র এবং উপজেলার শুকুরহাটা গ্রামের সায়েম উদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে। আর এই হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত তারই সহপাঠী মো. ফরহাদ রেজা (১৬), যে চর চান্দড়া গ্রামের জাহিদুল ইসলাম ফকিরের ছেলে।
পুলিশ জানায়, ১৯ অক্টোবর ২০২৫ তারিখ দুপুর থেকে নিখোঁজ ছিল আমির হামজা। তার পরিবার অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কোনো সন্ধান পায়নি। এর দুই দিন পর, ২১ অক্টোবর সন্ধ্যায় মাদ্রাসার পাশের একটি ডোবায় একটি বস্তা ভাসতে দেখে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। তারা থানায় খবর দিলে আলফাডাঙ্গা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বস্তাটি উদ্ধার করে। বস্তা খুলতেই বেরিয়ে আসে নিখোঁজ আমির হামজার নিথর দেহ। পুলিশ লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
হত্যাকাণ্ডের পর দ্রুত তদন্তে নামে পুলিশ। মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তাদের তদন্তের জালে ধরা পড়ে সহপাঠী ফরহাদ রেজা। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই সে হত্যার দায় স্বীকার করে নেয়।
ফরহাদ জানায়, সে আমিরের কাছে ৫০ টাকা ধার নিয়েছিল। আমির সেই টাকা ফেরত চাইলে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। একপর্যায়ে আমির তাকে গালাগাল করলে সে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং গলা টিপে আমিরকে হত্যা করে। এরপর প্রমাণ লোপাটের জন্য লাশটি একটি বস্তায় ভরে মাদ্রাসার পাশের ডোবায় ফেলে দেয়।
ছেলের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন বাবা সায়েম উদ্দিন বিশ্বাস। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, "আমার ছেলে সকালে মাদ্রাসার পোশাক পরে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল। আর ফিরে এল না। ওর তো কারও সঙ্গে এমন শত্রুতা ছিল না।"
আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজালাল আলম জানান, "খবর পেয়ে আমরা দ্রুত লাশ উদ্ধার করি এবং তদন্তে সহপাঠী ফরহাদের সম্পৃক্ততা পেয়ে তাকে গ্রেপ্তার করেছি। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।"
মধুখালী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আজম খান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, "এটি একটি মর্মান্তিক ঘটনা। আমরা মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রকৃত আসামিকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। আসামি পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।"
কিশোর বয়সে এমন নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আলফাডাঙ্গার সাধারণ মানুষ স্তম্ভিত। তারা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ঘাতকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
What's Your Reaction?






