ছাই ধোঁয়ার অত্যাচারে অতিষ্ঠ গ্রামবাসী, মাঠে নামল প্রশাসন

যে গ্রামের বাতাসে একসময় মিশে ছিল মাটির স্নিগ্ধ ঘ্রাণ আর শিশুদের উচ্ছল হাসি, আজ সে আকাশ ছেয়ে গেছে বিষাক্ত কালো ধোঁয়া আর উড়ন্ত ছাইয়ের চাদরে। ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার কুসুমদী গ্রামের এই শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির জন্য দায়ী 'শ্যামা রাইস মিল' নামে একটি চাতাল। শুধু পরিবেশ দূষণই নয়, মিলের বিশালাকার ট্রাকের দানবীয় চাকায় পিষ্ট হয়ে গ্রামের একমাত্র রাস্তাও পরিণত হয়েছে মরণফাঁদে। দীর্ঘ পাঁচ বছরের এই অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শেষ দেখতে অবশেষে প্রশাসনের দরজায় কড়া নেড়েছেন ভুক্তভোগী বাসিন্দারা।
এই গুরুতর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে আলফাডাঙ্গা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ কে এম রাহানুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা শুভ মণ্ডল জানান, প্রায় পাঁচ বছর আগে ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকায় বিপ্লব কুণ্ডু পলাশ মিলটি স্থাপন করেন। অপরিকল্পিতভাবে তৈরি চুলার ধোঁয়া ও ছাই সরাসরি পার্শ্ববর্তী বাড়িগুলোতে প্রবেশ করে জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করছে। তিনি বলেন, "চুলার ছাই আর ধোঁয়ায় আমাদের শিশু ও বয়স্করা শ্বাসকষ্টে ভুগছে। গরমে চুলার তীব্র তাপে ঘরে টেকা দায়। এর ওপর ধানের ধুলা তো আছেই, যা আমাদের জীবনকে আরও অসহনীয় করে তুলেছে।"
আরেক ভুক্তভোগী মরনি মন্ডল বলেন, "আমরা বহুবার মিল মালিককে অনুরোধ করেছি চাতালটি নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিতে, কিন্তু তিনি আমাদের কথায় কোনো কর্ণপাত করেননি।"
রাস্তাঘাটের বেহাল দশা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন এলাকাবাসী। সুকুমার কীর্তনীয়া নামে এক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, "এই মিলের মালামাল আনা-নেওয়ার জন্য দিনরাত ১৫-২০ টনের বড় বড় ট্রাক আমাদের সরু রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। এতে রাস্তা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে এবং চলাচল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।"
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে শ্যামা রাইস মিলের মালিক বিপ্লব কুণ্ডু পলাশ দাবি করেন, তিনি পরিবেশ অধিদপ্তরের সব নিয়ম মেনেই মিল পরিচালনা করছেন। তিনি বলেন, "আমার সব কাগজপত্র বৈধ এবং আমি তা জমা দিতে প্রস্তুত। পরিবেশ দূষণ বা রাস্তা নষ্টের যে অভিযোগ উঠেছে, তা খতিয়ে দেখা হোক।"
এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ কে এম রাহানুর রহমান বলেন, "আমি সরেজমিনে পরিদর্শন করে উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনেছি। অভিযোগকারী এবং মিল মালিক উভয়কেই আগামী রবিবার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আমার অফিসে আসতে বলেছি। সমস্ত নথি ও পরিবেশ আইন পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।" এখন প্রশাসনের পদক্ষেপের দিকেই তাকিয়ে আছে ভুক্তভোগী কুসুমদী গ্রামের বাসিন্দারা।
What's Your Reaction?






