সন্তানের পিতৃপরিচয় পেতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার কার্যালয়ে হাজির এ.এস.আইয়ের ৩ সন্তানসহ দুই স্ত্রী

মাহমুদুল হাসান, ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধিঃ
Aug 3, 2025 - 19:16
 0  1
সন্তানের পিতৃপরিচয় পেতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার কার্যালয়ে হাজির এ.এস.আইয়ের ৩ সন্তানসহ দুই স্ত্রী

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানায় কর্মরত সহকারী উপ-পরিদর্শক (এ.এস.আই) শেখ সাদীর বিরুদ্ধে স্ত্রী-সন্তানদের ভরণপোষণ না দেওয়া এবং সন্তানের পিতৃপরিচয় অস্বীকারের অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগ নিয়ে তার প্রথম স্ত্রী তানিয়া সুলতানা ও তালাকপ্রাপ্ত তৃতীয় স্ত্রী ঢাকা মহানগর পুলিশের এসবিতে কর্মরত কবিতা আক্তার তিন সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে গত ২৮ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে হাজির হয়ে পৃথক লিখিত অভিযোগ করেন।

পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে গাছের ছায়ায় বসে অপেক্ষা করছিলেন দুই নারী ও তাদের তিন সন্তান—দুই ছেলে ও এক মেয়ে। চোখেমুখে হতাশার ছাপ, কণ্ঠে অভিমান। অভিযোগ, বাবা থেকেও নেই বাবা; দেন না কোনো ভরণপোষণ, রাখেন না যোগাযোগ, এমনকি এক সন্তানের পিতৃত্বও অস্বীকার করছেন তিনি।

২০০৩ সালে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার তানিয়া সুলতানাকে ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক বিয়ে করেন শেখ সাদী। ২০০৮ সালে ঢাকার একটি গার্মেন্টসে চাকরিরত অবস্থায় দ্বিতীয় বিয়ে করেন পারভীন নামে এক নারীকে। এরপর থেকেই প্রথম স্ত্রী ও এক ছেলে-মেয়ের খোঁজখবর রাখা বন্ধ করে দেন। আদালতের রায়ে ভরণপোষণ দেওয়ার নির্দেশ পেলেও পালিয়ে যান সাদী।

২০১৫ সালে খবর পান—তৃতীয় স্ত্রী হিসেবে কবিতা আক্তারকে বিয়ে করেছেন সাদী। শালিসের মাধ্যমে কিছুদিন ভরণপোষণ দিলেও পরে আবার বন্ধ করে দেন। বর্তমানে অনার্স পড়ুয়া মেয়ে ও সদ্য এসএসসি পাস করা ছেলেকে নিয়ে অসহায় জীবনযাপন করছেন তানিয়া।

প্রথম স্ত্রীর সন্তান শেখ স্নিগ্ধা ও শেখ সিয়াম বলেন, ‘বাবা যেখানে বদলি হন, সেখানেই বিয়ে করেন। আমাদের ভরণপোষণ দেন না, খোঁজও নেন না। আমরা শুধু বাবার অধিকার চাই।’

২০১২ সালে মিরপুরে বিয়ে হয় কবিতা আক্তার ও শেখ সাদীর। গর্ভাবস্থায় জানতে পারেন, তার স্বামী ইতোমধ্যেই দুটি বিয়ে করেছেন। ২০১৪ সালে জন্ম নেয় ছেলে শেখ মোহাম্মদ আব্দুল বিন সাদ। পরে বান্দরবানে বদলি হলে আবারও এক নারী কনস্টেবলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান সাদী।

২০২০ সালে কবিতা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে মালিতে গেলে, দেশে ফিরে দেখেন স্বামী তার বিরুদ্ধে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তুলে তালাক দিয়েছেন এবং ছেলের পিতৃত্ব অস্বীকার করেছেন। কবিতা আক্তারের অভিযোগ, সাদীর বিয়ে করাই যেন নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে তার চতুর্থ স্ত্রীও আছেন এবং সামাজিক মাধ্যমে হুমকি দেন বলে দাবি করেছেন কবিতা।

ছেলে শেখ মোহাম্মদ আব্দুল বিন সাদ বলেন, ‘স্কুলে বন্ধুদের বাবাদের দেখে কষ্ট লাগে। আমি শুধু আমার বাবার পরিচয় চাই।’

যোগাযোগ করলে তিনি শুধু বলেন, ‘আমি এসে দেখা করবো।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার মো. এহতেশামুল হক বলেন, ‘এ.এস.আই শেখ সাদীর বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ এসেছে। তদন্ত চলছে। সত্যতা পেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow