বাস রাখলে উঠাতে হয় ক্রেন দিয়ে, দুর্ভোগে ৩০ হাজার যাত্রী

দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার ও সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে পিরোজপুর জেলা বাস টার্মিনাল এখন সম্পূর্ণভাবে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। টার্মিনালের ভেতরে বড় বড় গর্তে পানি জমে ময়লা-আবর্জনার স্তূপে পরিণত হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে—টার্মিনালে বাস ঢুকলে কাদা-মাটিতে আটকে যায়, যা তুলতে গেলে যেন ক্রেন ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়।
জানা গেছে, এই টার্মিনাল ব্যবহার করে প্রতিদিন ১৪টি রুটের ৬ শতাধিক বাস ও মিনিবাসে প্রায় ৩০ হাজার যাত্রী চলাচল করে। কিন্তু আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরের লুটপাট, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে টার্মিনালটি অচল অবস্থায় রয়েছে। খানাখন্দে ভরা টার্মিনালে সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে যাত্রীদের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়।
২০০৬ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ শহরের বাইপাস সড়কের পাশে মাছিমপুর এলাকায় এই বাস টার্মিনাল নির্মাণ করে। শুরুতে সুবিধাগুলো পর্যাপ্ত থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যাত্রী ও বাসের সংখ্যা বাড়ায় তা অপর্যাপ্ত হয়ে পড়ে। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে কর্তৃপক্ষ টাকা নিয়ে অনুমতি দিতে থাকায় ধারণক্ষমতার প্রায় ১০ গুণ বাস এখন এই টার্মিনালে প্রবেশের চেষ্টা করে, যার ফলে ওভারলোড চাপ সহ্য করতে না পেরে টার্মিনাল ভেঙে পড়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে অনেক বাস টার্মিনালে প্রবেশ করতে না পেরে রাস্তার দুই পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়, যা যানজটে ও দুর্ঘটনায় রূপ নিচ্ছে।
বাস চালক আবুল হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “স্বৈরাচার সরকারের ১৬ বছরে কোনো উন্নয়ন হয়নি। ভেবেছিলাম পরিবর্তনের পরে উন্নয়ন হবে, কিন্তু এক বছরেও দৃশ্যমান কিছু দেখতে পাইনি।”
পিরোজপুর-খুলনাগামী যাত্রী আ. মালেক বলেন, “সামান্য বৃষ্টি হলেই টার্মিনালের সামনে পানি জমে যায়, এতে টিকিট কিনতে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয়।”
এদিকে স্থানীয় বাস মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি মশিউর রহমান মহারাজের বিরুদ্ধে রোটেশনের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বাস প্রতি ১৫-২০ হাজার টাকা, শ্রমিক ইউনিয়ন প্রতি বাসে ৬০ টাকা, পৌর টোল ৫০ টাকা এবং পরিবহন খাতে প্রতি বাসে ১০০ টাকা চাঁদা আদায় করা হলেও উন্নয়ন হয়নি। ফলে টার্মিনাল এখন অভিভাবকহীন অবস্থায় পড়ে আছে।
পিরোজপুর পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসাইন বলেন, “টার্মিনালের দেখাশোনার দায়িত্ব আমাদের পাশাপাশি বাস মালিক সমিতিরও রয়েছে। আমরা বরাদ্দের জন্য চেষ্টা করছি, বরাদ্দ পেলে সংস্কার শুরু করব। মালিক সমিতিরও উচিত টার্মিনালের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়া।”
What's Your Reaction?






