হাসিনা-কাদেরের ঘনিষ্ঠ আ.লীগ নেতাদের সাথে বিএনপি নেতার ছবি ভাইরাল

রিপন মজুমদার, জেলা প্রতিনিধি, নোয়াখালীঃ
Jul 21, 2025 - 20:44
 0  8
হাসিনা-কাদেরের ঘনিষ্ঠ আ.লীগ নেতাদের সাথে বিএনপি নেতার ছবি ভাইরাল

নোয়াখালীর রাজনীতিতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা বজলুল করিম চৌধুরী আবেদের একটি ছবি ও ভিডিও, যেখানে ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠ দুই আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে তাকে এক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দেখা গেছে। রবিবার (২০ জুলাই) বিকেল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এ দৃশ্য নিয়ে নোয়াখালী জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে চলছে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভ।

জানা গেছে, গত ১৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সানকেন মিডোজ স্টেট পার্কে রামপুর-মুছাপুর ইয়াং স্টার আয়োজিত ‘গেট টুগেদার ২০২৫’ অনুষ্ঠানে যোগ দেন বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ। সেখানে এক মঞ্চে বসে বক্তব্য দেন তিনি এবং আওয়ামী লীগের দুই আলোচিত নেতা—মুছাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান, নিউইয়র্ক স্টেট আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব আলী এবং রামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ইকবাল বাহার চৌধুরী।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ বিএনপি কর্মী-সমর্থকেরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কড়া সমালোচনা করছেন। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা কীভাবে আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের প্রতীক হয়ে ওঠা ব্যক্তিদের সঙ্গে একই অনুষ্ঠানে, একই মঞ্চে উঠলেন?

স্থানীয় সূত্র মতে, অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া আইয়ুব আলী ও ইকবাল বাহার চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে ওবায়দুল কাদের ও তাঁর ভাই আবদুল কাদের মির্জার ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত। তাদের বিরুদ্ধে আছে বালু চুরি, সরকারি খাসজমি দখলসহ নানা অভিযোগ। অভিযোগ রয়েছে, গত ১৭ বছরে এই দুই নেতা বিএনপি ও বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের দমন-নিপীড়নে জড়িত ছিলেন। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, তাদের সঙ্গে আবেদের এমন ছবি দলের ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।

সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি পোস্টে বিএনপি সমর্থক তাফসির হোসেন লেখেন, “নোয়াখালী-৫ আসনের নেতাকর্মীরা আবেদ ভাইয়ের কাছ থেকে এমন কিছু আশা করেননি। আওয়ামী দোসরদের সঙ্গে ছবি দেখে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।” আরেকজন লিখেছেন, “আবেদ সাহেব কি আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিয়েছেন?”

বিষয়টি জানতে যোগাযোগ করা হলে আইয়ুব আলী ও ইকবাল বাহার চৌধুরীর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বিষয়টি নিয়ে বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ বলেন, “গত ১২ জুলাই আমি আমেরিকায় এসেছি। ছাত্রদলের কয়েকজন আমাকে ওই অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেয়। কারা উপস্থিত থাকবেন, সেটি আমাকে জানানো হয়নি।” তিনি দাবি করেন, “ওই দুই আওয়ামী লীগ নেতাকে আমি চিনি না। আয়োজকরা বলেছিল কেউ বক্তব্য রাখবে না, শুধু দুই মিনিট শুভেচ্ছা জানাতে হবে। আমি জানলে অবশ্যই সেখানে যেতাম না।”

তিনি আরও বলেন, “ওরা দুজন কাদের মির্জার খুব ক্লোজ এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত—পরে জেনেছি। আয়োজকরা আমাকে সতর্ক করলে এ ধরনের ছবি উঠত না।”

এ ঘটনায় এখনো নোয়াখালী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব হারুনুর রশীদ আজাদের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

বিষয়টি কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার ঝড় বইছে। অনেকে বলছেন, রাজনীতিতে শুদ্ধতা ফেরাতে দলীয় নেতাদের আরও সচেতন থাকা জরুরি, না হলে জনআস্থা হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow