সুইচ গিয়ারসহ আটক যুবকদের ছাড়াতে থানায় দেড় লাখ টাকার লেনদেনের অভিযোগ, এসআই প্রত্যাহার

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে সুইচগিয়ার চাকুসহ আটক পাঁচ যুবককে দেড় লাখ টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়ার পর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমির হামজাকে শনিবার (১৪ জুন) রাতে জেলা পুলিশ লাইন্সে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
জানা যায়, শুক্রবার (১৩ জুন) বিকালে শ্রীনগর উপজেলার ভাগ্যকুল মান্দ্রা এলাকার পাঁচ যুবক—সম্পদ শিকদার (২৫), মো. আকাশ শেখ (২৬), মো. অন্তর (২৭), মো. হানিফ (২৬) ও মো. পান্নু (২৮)—লৌহজং উপজেলার সামুরবাড়ি এলাকায় ঘুরতে যান। ফেরার পথে এক দুর্ঘটনার পর তারা বিকল্প সড়ক ধরে গোয়ালীমান্দ্রা এলাকায় পৌঁছালে সেখানকার টহলরত পুলিশ তাদের আটক করে। এসআই আমির হামজার নেতৃত্বে এই অভিযান চালানো হয়। এসময় আকাশের ব্যাগ থেকে একটি সুইচগিয়ার চাকু উদ্ধার করা হয়।
আটককৃতদের একজন, মো. হানিফ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। অপরজন সম্পদ শিকদার মাদ্রাসার মাওলানা শাখায় অধ্যয়নরত। আটকের খবর পেয়ে তাদের পরিবারের সদস্যরা থানায় ছুটে আসেন। শনিবার (১৪ জুন) সকালে তাদের আদালতে পাঠানোর জন্য গাড়ি এলেও, তাদের পাঠানো হয়নি। বিকালে চারটার দিকে হঠাৎ করেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ ঘটনার পর রাতে আকাশ শেখ সামাজিক মাধ্যমে এক ভিডিও বার্তা দেন। সেখানে তিনি বলেন, “দেড় লাখ টাকা দেওয়ার পর আমাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এসআই আমির হামজা বিষয়টি দেখেছেন।” ভিডিওটি রাতেই ছড়িয়ে পড়ে, শুরু হয় ব্যাপক সমালোচনা। এরপরই পুলিশ প্রশাসন এসআই আমির হামজাকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে।
এ বিষয়ে আরেকটি সূত্র জানায়, শনিবার (১৪ জুন) এক লাখ টাকা দেওয়া হয় এবং বাকি ৫০ হাজার রবিবার (১৫ জুন) দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়।
রবিবার (১৫ জুন) দুপুরে আকাশের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আতঙ্কে পরিবার উদ্বিগ্ন। আকাশের মা জানান, “সকালে অন্য চারজনের পরিবারের কয়েকজন এসে আমাকে হুমকি দিয়েছে।” আকাশের স্ত্রী জানান, “ভিডিও দেয়ার পর থেকেই ফোনে হুমকি পাচ্ছে আকাশ। সে এখন বাড়ি ছাড়া।”
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে গেলে প্রত্যাহারকৃত এসআই আমির হামজা বলেন,
“আমি সুইচগিয়ার সহ পাঁচজনকে আটক করি। তাদের ছেড়ে দেওয়া বা চালান দেওয়া ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে হয়েছে। আমি কাউকে ছাড়িয়ে দেওয়ার জন্য এক কাপ চাও খাইনি।”
শ্রীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাকিল আহমেদ বলেন, “ঘটনার তদন্ত চলছে। টাকা লেনদেনের প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। সুইচগিয়ার চাকুটি রাস্তায় পাওয়া গেছে, সে কারণেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”
মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শ্রীনগর সার্কেল) আনিসুর রহমান বলেন, “আটককৃতদের বিরুদ্ধে কোনো পূর্ব অপরাধের রেকর্ড নেই। এলাকায় খোঁজ নিয়ে তাদের পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে অর্থ লেনদেনের বিষয়টি তদন্তাধীন।”
এই ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তদন্ত শেষে প্রকৃত তথ্য সামনে এলে এ বিষয়ে আরও পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ প্রশাসন।
What's Your Reaction?






