ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে প্রতিপক্ষের ৫০ ঘর, স্বর্ণালংকার ও গরু লুট

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের চান্দের বাড়ি ও ছলিম বাড়ি গোষ্ঠীর মধ্যে পূর্ব বিরোধের জেরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। এর জেরে রাতেই ব্যাপক হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ফলে আতঙ্কে ছলিম বাড়ির পুরুষরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। ঘরবাড়ি ফাঁকা হয়ে পড়েছে, নারী ও শিশুরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
সোমবার (১৯ মে) বিকেলে মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। সংঘর্ষে চান্দের বাড়ি গোষ্ঠীর মিয়াজুল হোসেন (৫০) গুরুতর আহত হন। পরে তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। নিহত মিয়াজুল নাটাই গ্রামের তোতা মিয়ার ছেলে। তিনি সদর উপজেলা থেকে আশুগঞ্জের লালপুর পর্যন্ত চলাচলকারী সিএনজি (অটোরিকশা) পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি ছিলেন।
মিয়াজুলের মৃত্যুর খবর গ্রামে পৌঁছানোর পরই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। রাতেই প্রতিপক্ষ ছলিম বাড়ি গোষ্ঠীর অন্তত ৪০ থেকে ৫০টি বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়। ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে ঘরবাড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এখনো পোড়া ঘরবাড়ি থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। ছলিম বাড়ির লোকজন জানিয়েছেন, প্রতিপক্ষের লোকজন তাদের ৩০টি গরু, ৫০ ভরি স্বর্ণালংকার ও ঘরের মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে।
ছলিম বাড়ির নুরুন্নাহার বেগম অভিযোগ করে বলেন, “তারা পেট্রোল ঢেলে আমার বসতঘরে আগুন দিয়েছে।” একই এলাকার রিয়া বেগম ও জান্নাত আক্তার বলেন, “সন্তানদের নিয়ে পড়নে থাকা কাপড়েই ঘর ছেড়েছি। না পালালে হয়তো আগুনে পুড়িয়ে মারতো।” তারা আরও জানান, তাদের ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আলী হোসেন ও সাবেক ইউপি সদস্য সামসু মিয়া জানান, ছলিম বাড়ির পক্ষের প্রায় ৫০টি বসতঘরে হামলা-ভাঙচুরের পর অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এই ঘটনা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তারা। হামলা-লুটপাটে তাদের দাবি অনুযায়ী প্রায় একশো কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আতঙ্কে ছলিম বাড়ির সব পুরুষ এলাকা ছেড়েছেন। নারী-শিশুরাও নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান করছেন।
অন্যদিকে ছলিম বাড়ির গোষ্ঠী দাবি করছে, মিয়াজুল হোসেন হামলায় নয়, বরং হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তারা বলছেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্টেই প্রকৃত কারণ উঠে আসবে।
এদিকে এ ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানায় দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোজাফফর হোসেন জানান, নিহতের ঘটনায় ১২৯ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। এছাড়া ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে ছলিম বাড়ির পক্ষ থেকে ১৪৭ জনকে আসামি করে আরও একটি এজাহার দেওয়া হয়েছে।
পুরো নাটাই এলাকায় বর্তমানে চরম উত্তেজনা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা চলছে।
What's Your Reaction?






