বিদ্যুৎবিহীন ১২টি পরিবার গরমে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে জীবন বাঁচাচ্ছে

এক যুগ ধরে বিদ্যুৎবিহীন জীবনযাপন করছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তী ইউনিয়নের সেমড়া গ্রামের ১০-১২টি পরিবার। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় অসহনীয় গরমে শিশু ও বৃদ্ধরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। পরিবারগুলো বাধ্য হয়ে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে গিয়ে গরমের সময়গুলো পার করছেন।
সেমড়া গ্রামের মৃত সিরাজ উদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে ইসার উদ্দিন ভূঁইয়া উত্তর পাড়ার খালি জায়গায় প্রায় বারো বছর আগে বসতবাড়ি নির্মাণ করেন। তাঁর সাত ছেলের পরিবারসহ অন্তত ৩০ জন সদস্য সেখানে বসবাস শুরু করেন। এরপর ধীরে ধীরে আব্দুস সালাম, আবু ইউসুফ, ইকরাম হোসাইন, ফারুক আহমেদ ও মাছুম ভূঁইয়ার পরিবারসহ আরও পাঁচটি পরিবার সেখানে বসতি গড়েন। মোট সদস্য সংখ্যা এখন ৫০-৫৫ জন।
তবে এত বছর পেরিয়ে গেলেও আজও তারা বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। চারপাশে বিদ্যুতের খুঁটি ও লাইন থাকা সত্ত্বেও এই নির্দিষ্ট অংশে সংযোগ মিলছে না। গরমে কেউ অসুস্থ হলে বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় চিকিৎসা করতেও ভোগান্তির শেষ নেই।
ইসার উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, “পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে বারবার গিয়েছি, কোনো সুরাহা পাইনি। পরামর্শ অনুযায়ী এক দালালের মাধ্যমে ৭০ হাজার টাকায় চুক্তি করে ২০ হাজার টাকা দিয়েছি। এরপর দুই বছর ঘুরেও বিদ্যুৎ পাইনি। প্যানেল চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদের মাধ্যমে আবারো ৭ হাজার টাকা পাঠাই। পাঁচ মাসেও কোনো কাজ হয়নি।”
তিনি আরও জানান, অসুস্থ স্ত্রীকে ঢাকায় ছেলের বাসায় পাঠাতে হয়েছে। পুত্রবধূরা ছোট শিশুদের নিয়ে বাবার বাড়িতে আছেন। বাড়িতে থাকাই যেন অভিশাপ হয়ে উঠেছে।
প্রবাসী মাছুম ভূঁইয়া বলেন, “বাড়িতে একটা ফ্রিজ বা ফ্যান চালাতে পারি না। মোবাইল চার্জ দিতে অন্যের বাড়িতে যাই। এমন অবস্থা যে কোনো মেহমান ডাকতে লজ্জা লাগে।”
স্থানীয় ইলেকট্রিশিয়ান আজগর আলী বলেন, “আমি সহায়তা করছি ঠিকই, তবে তাদের দিক থেকেও সহযোগিতা দরকার।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ ফারুক আহমেদ বলেন, “ইসার উদ্দিন চাচা আমাদের আত্মীয়। বিদ্যুৎ অফিস থেকে যোগাযোগের পর আমি নাম্বার দিয়ে দিয়েছিলাম। পরে তারা আবেদনপত্রের কপি হারিয়ে ফেলায় আর অফিসে যেতে পারেনি।”
বিজয়নগর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সাব-জোনাল অফিসের এজিএম প্রশান্ত বিশ্বাস জানান, “ভুক্তভোগীরা সরাসরি অফিসে যোগাযোগ করলে নিয়ম মেনেই সংযোগ দেওয়া হবে।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, শুধু অফিসে গেলে কাজ হয় না, নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করা হয়। অবিলম্বে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
What's Your Reaction?






