সাবেক ইইউ কমিশনারসহ ৫ জনের ভিসা দিল না যুক্তরাষ্ট্র
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে নির্দিষ্ট মতাদর্শ বা কনটেন্ট দমনের অভিযোগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সাবেক কমিশনার থিয়েরি ব্রেতোঁসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তিকে ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে এই নিষেধাজ্ঞার কথা জানায়। বুধবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এই পদক্ষেপের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত কিছু এনজিও এবং চরমপন্থী কর্মী বিদেশি সরকারের হয়ে সেন্সরশিপ বা কণ্ঠরোধের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের এই কার্যক্রম সরাসরি মার্কিন বক্তা ও মার্কিন কোম্পানিগুলোকে লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন।
নিষেধাজ্ঞার তালিকায় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নাম থিয়েরি ব্রেতোঁ। তিনি ইউরোপীয় কমিশনের সাবেক শীর্ষ প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রক এবং ইউরোপের ‘ডিজিটাল সার্ভিসেস অ্যাক্ট’ (ডিএসএ)-এর মূল রূপকার। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর মনে করে, এই আইনের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীলদের অভিযোগ, ডিএসএ মূলত ডানপন্থী মতামত দমনের একটি হাতিয়ার।
ব্রেতোঁ ছাড়াও তালিকায় রয়েছেন:
১. ক্লেয়ার মেলফোর্ড: যুক্তরাজ্যভিত্তিক ‘গ্লোবাল ডিসইনফরমেশন ইনডেক্স’ (জিডিআই)-এর প্রধান। অভিযোগ রয়েছে, মার্কিন করদাতাদের অর্থ ব্যবহার করে তিনি মার্কিন গণমাধ্যমকে কালো তালিকাভুক্ত করতে উৎসাহিত করেছেন।
২. ইমরান আহমেদ: ‘সেন্টার ফর কাউন্টারিং ডিজিটাল হেইট’ (সিসিডিএইচ)-এর প্রধান।
৩. আন্না-লেনা ফন হোডেনবার্গ ও জোসেফিন বালোঁ: জার্মান সংগঠন ‘হেটএইড’-এর দুই প্রধান নির্বাহী।
থিয়েরি ব্রেতোঁ এর আগেও বিশ্বের শীর্ষ ধনী ও এক্স-এর (সাবেক টুইটার) মালিক ইলন মাস্কের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছিলেন। এক্স-এর ‘ব্লু টিক’ বা ভেরিফিকেশন পদ্ধতিকে ‘বিভ্রান্তিকর’ আখ্যা দিয়ে সম্প্রতি এক্স-কে ১২০ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা করে ইইউ কমিশন। এর জবাবে এক্স প্ল্যাটফর্মে কমিশনের বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ করে দেয়।
ভিসা নিষেধাজ্ঞার খবরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। থিয়েরি ব্রেতোঁ এক্সে ব্যঙ্গ করে লিখেছেন, "আমাদের মার্কিন বন্ধুদের উদ্দেশে বলছি—সেন্সরশিপ আসলে যেখানে ভাবছেন, সেখানে নেই।"
অন্যদিকে, জিডিআই ও হেটএইড-এর পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। জিডিআই-এর মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর কর্তৃত্ববাদী আক্রমণ। হেটএইড-এর কর্মকর্তারা একে ‘আইনের শাসন উপেক্ষা করা সরকারের দমনমূলক পদক্ষেপ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও স্পষ্ট করে বলেছেন, বিশ্বব্যাপী যারা ‘সেন্সরশিপ’ বা কণ্ঠরোধের সঙ্গে জড়িত, তাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। তিনি উল্লেখ করেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ পররাষ্ট্রনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিদেশি হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই।
What's Your Reaction?
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ