আলফাডাঙ্গার রাজপথ কাঁপিয়ে বিএনপির গৃহদাহ: কমিটি ও মনোনয়ন নিয়ে দুই গ্রুপের শক্তিপ্রদর্শনে চরম উত্তেজনা
একই দল, একই আদর্শের দাবি, অথচ রাজপথে তারা একে অপরের প্রতিপক্ষ। বুধবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা এক নজিরবিহীন রাজনৈতিক উত্তাপের সাক্ষী হলো।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর অভ্যন্তরীণ কোন্দল যেন আগ্নেয়গিরির মতো ফেটে পড়ল শহরের রাজপথে। নবগঠিত কমিটি এবং ভবিষ্যৎ মনোনয়ন নিয়ে দুই বিবদমান গ্রুপের পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভে প্রকম্পিত হলো গোটা এলাকা, যা দলের বিভক্তির প্রাচীরকে আরও স্পষ্ট করে তুলল। বাতাসে ভাসছিল উত্তেজনা আর অসন্তোষের বারুদ।
বিকেলের নিস্তব্ধতা ভেঙে প্রথম রাজপথে নামে বিএনপির 'ঝুনু গ্রুপ' হিসেবে পরিচিত বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। তাদের হাতে ছিল বাঁশের লাঠি, চোখে ছিল ক্ষোভের আগুন। হাসপাতাল এলাকা থেকে বের হওয়া তাদের বিশাল মিছিলটি "অবৈধ কমিটি মানি না, মানবো না" শ্লোগানে বাজারের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে। চৌরাস্তায় এসে এই বিক্ষোভ রূপ নেয় এক প্রতিবাদ সমাবেশে।
সমাবেশে বক্তাদের কণ্ঠে ঝরে পড়ে তীব্র ক্ষোভ আর বঞ্চনার সুর। তারা বলেন, "যারা বছরের পর বছর রক্ত দিয়ে, ঘাম ঝরিয়ে, জেল-জুলুম সহ্য করে বিএনপিকে বাঁচিয়ে রেখেছে, আজ সেই ত্যাগী সৈনিকদের অপমান করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের দালাল আর টাকার কুমিরদের দিয়ে 'পকেট কমিটি' বানিয়ে তৃণমূলের বুকে ছুরি চালানো হয়েছে।"
তারা বজ্রকণ্ঠে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, "এই প্রহসনের কমিটি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না। রাজপথেই ফয়সালা হবে।"
এই বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খোশবুর রহমান, পৌর বিএনপির সহসভাপতি রেজাউল করিম, পৌর যুবদলের আহ্বায়ক সৈয়দ মিজানুর রহমানসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী।
এক পক্ষের হুঙ্কার শেষ না হতেই, অপর প্রান্ত থেকে ভেসে আসে পাল্টা শ্লোগান। ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার নাসিরুল ইসলামের অনুসারীরা উপজেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয় থেকে বের করে আরেকটি বিশাল মিছিল। তারাও বাজারের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে চৌরাস্তায় এসে সমাবেশে মিলিত হয়।
তাদের ক্ষোভের কারণ ছিল ভিন্ন। বক্তারা বলেন, "আমরা শুনতে পাচ্ছি, বিগত আওয়ালীগের মনোনীত প্রার্থী আব্দুর রহমান সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী আরিফুর রহমান দোলনকে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। এই অবিচারের খবরে আমরা ক্ষুব্ধ। দলের দুঃসময়ের কাণ্ডারিদের বাদ দিয়ে উড়ে এসে জুড়ে বসা কাউকে মেনে নেওয়া হবে না।"
উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল মান্নান মিয়া আব্বাস, পৌর বিএনপির সভাপতি মো. রবিউল হক রিপন, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নূরু জামাল খসরু, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. হাসিবুল হাসানসহ অঙ্গসংগঠনের হাজারো নেতাকর্মী
একই দলের দুই গ্রুপের এই মুখোমুখি শক্তি প্রদর্শন আলফাডাঙ্গায় বিএনপির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে এক বড় প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে। এই গৃহদাহের আগুন দলকে কোথায় নিয়ে যায়, তা দেখার অপেক্ষায় এখন পুরো ফরিদপুরের রাজনৈতিক মহল।
What's Your Reaction?
কবির হোসেন, আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর ) প্রতিনিধিঃ