আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পাহাড়ে নির্মাণকাজ

মোঃ কামরুজ্জামান, লামা প্রতিনিধি, বান্দরবানঃ
Oct 21, 2025 - 12:07
Oct 21, 2025 - 12:07
 0  3
আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পাহাড়ে নির্মাণকাজ

বান্দরবানের লামা ও আলীকদম উপজেলার সীমান্তবর্তী ম্যারাইনতং পাহাড়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ম্রো এবং মার্মা সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সম্প্রতি দুই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) বিরোধপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

রবিবার (১৯ অক্টোবর) লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনজুর আলম যৌথভাবে ম্যারাইনতং পাহাড় পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনের সময় তারা তৈন ও সাঙ্গু মৌজার হেডম্যানদের সাথে কথা বলেন এবং বিরোধপূর্ণ জায়গায় সীমানা নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। এর মধ্যে রয়েছে তাঁবু স্থাপন, বাইক পার্কিং এবং পর্যটকদের কাছ থেকে অর্থ আদায়।

বিরোধের সূত্রপাত মূলত ম্যারাইনতং পাহাড়ের জমির মালিকানা নিয়ে। সাঙ্গু মৌজার হেডম্যান সিংপাত ম্রোর অভিযোগ, তাদের ভোগদখলীয় জমিতে উ: উইচারা ভিক্ষু ও তার অনুসারীরা জোরপূর্বক স্থাপনা নির্মাণ করছেন। গত ২৯ এপ্রিল, ২০২৪ তারিখে সিংপাত ম্রো লামা নির্বাহী আদালতে একটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ম্যারাইনতং বৌদ্ধবিহারের পরিচালক উ: উইচারা ভিক্ষুসহ দশজনকে আসামি করা হয়।

মামলার বিবরণে বলা হয়, সিংপাত ম্রোর দখলে থাকা জমিতে নির্মিত তিনটি বাঁশ ও ছনের কটেজ ২৭ এপ্রিল ভাংচুর করে প্রায় ২০ লাখ টাকার মালামাল লুট করা হয়। এই ঘটনার পর থেকে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতারা বেশ কয়েকবার আলোচনায় বসেন। বান্দরবানের সাবেক সাংসদ সাচিংপ্রু জেরীর নির্দেশনায় একটি কমিটিও গঠন করা হয়, যারা উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানায়।

গত ৩০ জুলাই লামা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালত একটি নিষেধাজ্ঞা জারি করে। আদেশে বলা হয়, উ: উইচারা ভিক্ষু গং তাদের বন্দোবস্তকৃত জায়গা ছাড়া সাঙ্গু মৌজার নালিশি জমি ও সরকারি খাস জমিতে প্রবেশ করতে পারবেন না। আদালত সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) সরকারি খাস জমি দ্রুত সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনার এবং সার্ভেয়ারকে বিরোধপূর্ণ ৫ একর জমি পরিমাপ করে বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন।

কিন্তু সাঙ্গু মৌজার ম্রো বাসিন্দাদের অভিযোগ, আদালতের নিষেধাজ্ঞা এবং প্রশাসনের মৌখিক নির্দেশনা অমান্য করে উ: উইচারা ভিক্ষুর অনুসারীরা বৌদ্ধবিহারকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে পর্যটন কটেজ ও তাঁবু বসিয়ে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতেই দুই ইউএনও সম্প্রতি সরেজমিন পরিদর্শনে যান।

পরিদর্শনকালে লামা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুবায়েদ আহমেদ, লামা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. তোফাজ্জল হোসেন এবং উভয় মৌজার হেডম্যান ও স্থানীয় বাসিন্দারা উপস্থিত ছিলেন। দুই ইউএনও দ্রুততম সময়ের মধ্যে সীমানা পরিমাপের জন্য লামা উপজেলা এসিল্যান্ড ও আলীকদম উপজেলা কানুনগোকে দায়িত্ব দিয়েছেন।

এই ঘটনায় এলাকায় চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং একটি স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে আছে বিবদমান পক্ষগুলো।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow