নিরাপত্তাহীনতায় চাউরা আলীনগর: মাদকসেবীদের ভয়ে থানায় এলাকাবাসী

মোঃ শামীম মিয়া , বিজয়নগর প্রতিনিধি, ব্রাহ্মণবাড়িয়াঃ
Oct 19, 2025 - 11:54
 0  3
নিরাপত্তাহীনতায় চাউরা আলীনগর: মাদকসেবীদের ভয়ে থানায় এলাকাবাসী
নিরাপত্তাহীনতায় চাউরা আলীনগর: মাদকসেবীদের ভয়ে থানায় এলাকাবাসী

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার সিংগারবিল ইউনিয়নের চাউরা আলীনগর, কবলাছরাসহ বিভিন্ন গ্রামে মাদকসেবীদের দৌরাত্ম্যে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত এক মাস ধরে মাদকাসক্তদের একটি চক্র এলাকায় নিয়মিত চুরি, লুটপাট এবং সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ফলে এসব এলাকার মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, মাদক সেবনের টাকা জোগাড় করতে না পেরেই দুষ্কৃতিকারীরা রাতের অন্ধকারে এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। অতিষ্ঠ হয়ে সিংগারবিল ইউনিয়ন বিএনপি'র যুবদলের সহ-সভাপতি মোঃ আজিজুল হক বাদী হয়ে ১৮ অক্টোবর, শনিবার, চারজনের নাম উল্লেখসহ আরও ৫-৬ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে বিজয়নগর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

ক্ষোভ প্রকাশ করে মোঃ আজিজুল হক এবং এলাকার অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিরা জানান, "মাদকসেবীদের অত্যাচারে আমরা আর পেরে উঠছি না। দিনের পর দিন যদি এভাবেই চলতে থাকে, তাহলে আমাদের বাঁচার কোনো উপায় থাকবে না।"

জানা যায়, চাউরা আলীনগর থেকে কবলাছড়া পশ্চিম মিরাসানী যাওয়ার একমাত্র সংযোগ ব্রিজটি গত এক মাস ধরে অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। মাদকাসক্তরা রাতের আঁধারে ব্রিজের লোহার রড, গ্রিলের অংশসহ অন্যান্য সরকারি সরঞ্জাম খুলে নিয়ে যাচ্ছে। এতে ব্রিজটি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়ছে।

শুধু তাই নয়, মসজিদ, মাদ্রাসা, বাজার এবং বাড়িঘরেও প্রতিনিয়ত চুরির ঘটনা ঘটছে। গত ১৬ই অক্টোবর, শুক্রবার, সকাল আনুমানিক দশটার দিকে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এলাকাবাসী জানতে পারেন যে, চুরি যাওয়া একটি টিউবওয়েল ভাঙারির দোকানে বিক্রি করা হচ্ছে। এ সময় স্থানীয়রা হাতেনাতে দুই চোরকে আটক করে। পরে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের পরামর্শে, চোরদের অভিভাবকদের কাছ থেকে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে একটি সালিশি বৈঠকের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। তবে দুঃখজনকভাবে, নির্ধারিত তারিখে একজন চোর ও তার অভিভাবক উপস্থিত থাকলেও বাকিরা পলাতক থাকায় সালিশকারীরা আগামী ২১শে অক্টোবর, মঙ্গলবার, এশার নামাজের পর কবলাছড়া জামে মসজিদের মাঠে সকল চোর ও তাদের অভিভাবকদের পুনরায় উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একটি নির্দিষ্ট মাদকসেবী চক্র নিয়মিতভাবে গৃহস্থালির আসবাবপত্র, মোবাইল ফোন, টিউবওয়েলসহ বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। এমনকি ১৬ই অক্টোবর চোরদের হাতেনাতে ধরার পর, তারা উল্টো অভিযোগকারী আজিজুল হককে বিভিন্নভাবে হুমকি ও আক্রমণের চেষ্টা চালায়, যা গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। স্থানীয়রা জানান, এর আগেও বহুবার প্রতিবাদ ও বাধা দেওয়া হলেও দুষ্কৃতিকারীরা তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে বিজয়নগর থানায় একাধিক মাদকের মামলা রয়েছে বলেও জানা গেছে।

এ বিষয়ে সিংগারবিল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “এ ধরনের অভিযোগ আমি আগেও পেয়েছি। আমরা এলাকার মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করব। প্রয়োজনে কঠোর বিচার নিশ্চিত করে এই ধরনের দুঃসাহস বন্ধ করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন কাজ করার সাহস না পায়।” তিনি দ্রুত প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

পরিস্থিতির ভয়াবহতায়, স্থানীয় বাসিন্দারা বিজয়নগর পুলিশ প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। চুরি ও ভাঙচুর রোধে রাতে পুলিশি টহল বাড়ানো এবং কঠোর নজরদারির মাধ্যমে এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য তারা জোর দাবি জানিয়েছেন।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow