পিরোজপুর-১ আসনে জামায়াতের প্রার্থী মাসুদ সাঈদী, বিএনপি'র প্রার্থী চূড়ান্ত না হওয়ায় দলীয় কর্মীরা দ্বিধাদ্বন্দে

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পিরোজপুর-১ আসনে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। জামায়াতে ইসলামী তাদের একক প্রার্থী হিসেবে মাসুদ সাঈদীকে নিয়ে পুরোদমে প্রচার-প্রচারণা চালালেও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এখনো তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি। ফলে দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে বিরাজ করছে দ্বিধা ও অস্বস্তি।
পিরোজপুর সদর, ইন্দুরকানী ও নাজিরপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত পিরোজপুর-১ আসনটি রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেমেছেন সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী। তিনি জেলা জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে সদর, ইন্দুরকানী ও নাজিরপুর উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা করছেন। তার অনুপস্থিতিতেও স্থানীয় নেতারা প্রচারণার ধারা অব্যাহত রেখেছেন।
অন্যদিকে, বিএনপিতে সম্ভাব্য প্রার্থীর ছড়াছড়ি থাকলেও জোটের প্রার্থী চূড়ান্ত না হওয়ায় নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) প্রধান সমন্বয়ক ও ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা মোস্তফা জামাল হায়দারের নাম বেশ আলোচনায় রয়েছে। তিনি ইতোমধ্যে গণসংযোগ ও সভা-সমাবেশ শুরু করেছেন এবং বিএনপির একটি অংশ তার পক্ষে কাজ করছে। এছাড়াও, পিরোজপুর জেলা বিএনপির সদ্য সাবেক আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন, জেলা বিএনপির নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক বেগম এলিজা জামান এবং জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও নাজিরপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম খানও প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন। পাশাপাশি জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের পরিচালক হাফিজ আল আসাদ সাঈদ খান, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম দুলাল এবং কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক আলাউদ্দিন খানও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন।
বিএনপির একাধিক প্রার্থী মাঠে থাকায় দলের সাধারণ কর্মী ও ভোটাররা রয়েছেন দ্বিধাদ্বন্দ্বে। তাদের অনেকেই দলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন এবং দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই কাজ করার কথা বলছেন। এই অনিশ্চয়তার কারণে বিএনপির প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতিকূলতার সম্মুখীন হচ্ছেন।
উল্লেখ্য, পিরোজপুর-১ আসনে নাজিরপুর উপজেলার ভোটার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হওয়ায় প্রার্থী বাছাই ও ভোটের ফলাফলে এই উপজেলার ভোটারদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। এছাড়া, এই আসনের মোট ভোটারের প্রায় এক-চতুর্থাংশ হিন্দু সম্প্রদায়ের। আওয়ামী লীগের প্রার্থী না থাকায় এই ভোটব্যাংক এবারের নির্বাচনে অন্যতম নিয়ামক শক্তি হয়ে উঠতে পারে। তাই অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন, দলীয় ইমেজের পাশাপাশি প্রার্থীদের ব্যক্তিগত ইমেজও ভোটারদের মন জয়ে বড় ভূমিকা রাখবে।
এখন পর্যন্ত এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, এবি পার্টি বা গণ অধিকার পরিষদের মতো দলগুলোর কোনো প্রার্থী মাঠে নামেননি। সব মিলিয়ে পিরোজপুর-১ আসনের নির্বাচনী পরিস্থিতি বেশ উত্তপ্ত এবং বিএনপি তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করার পরেই ভোটের লড়াইয়ের প্রকৃত চিত্র স্পষ্ট হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
What's Your Reaction?






