কাউখালীতে ব্রিজ নির্মাণের নামে খাল বন্ধ করে ঠিকাদার উধাও

একটি ব্রিজ বদলে দেবে জীবনযাত্রা—এমন স্বপ্নই দেখেছিল পিরোজপুরের কাউখালীর জয়কুল গ্রামের মানুষ। কিন্তু সেই স্বপ্নই এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। ব্রিজ নির্মাণের নামে খালের নৌ চলাচল বন্ধ করে প্রায় এক বছর আগে কাজ শুরু হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাঝপথে পালিয়ে যাওয়ায় থমকে গেছে সব। ফলে উন্নয়নের বদলে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকার দেড় শতাধিক ভূমিহীন পরিবারসহ হাজারো মানুষকে।
কাউখালীর চিড়াপাড়া নদীর শাখা জয়কুল খালের দক্ষিণ পাড়ে অবস্থিত সরকারি আবাসনে বসবাস করে প্রায় দেড় শতাধিক ভূমিহীন পরিবার। এই আবাসনের শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষকে পড়াশোনা, চিকিৎসা, হাট-বাজার কিংবা সরকারি দপ্তরের কাজে খাল পার হতে হয়। এলাকাবাসীর এই দুর্ভোগ লাঘবে ত্রাণ মন্ত্রণালয় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি ব্রিজ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়। কাজটি পায় মঠবাড়িয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আলো এন্টারপ্রাইজ।
কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ২০২৪ সালে কাজ শুরু করার পরই খালের মুখ বন্ধ করে দেয়। এরপর সামান্য কিছু কাজ করে লাপাত্তা হয়ে যায়। এর ফলে জয়কুল খালের নৌ-যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল, শাকসবজি ও অন্যান্য পণ্য স্বল্প খরচে নৌপথে শহরে নিতে পারছেন না, যার ফলে তারা মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। আমন ধানের বীজ পরিবহনেও তাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
অন্যদিকে, ব্রিজ না থাকায় খাল পারাপারে সবচেয়ে বেশি কষ্ট করছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। স্থানীয় বাসিন্দা মনির হোসেন বলেন, "খাল বন্ধ থাকায় পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে এবং পাশ দিয়ে নতুন খাল তৈরি হয়ে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ আরও বাড়িয়েছে।" আবাসনের বাসিন্দা ও স্কুলছাত্র মেহেদী ও লুবনা জানায়, ব্রিজের অভাবে অনেক শিশু ঠিকমতো স্কুলে যেতে পারছে না, যে কারণে বাধ্য হয়ে কিছু পরিবার আবাসন ছেড়ে অন্যত্র চলেও যাচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোঃ মফিজুর রহমান জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ শেষ করার জন্য পাঁচবার চিঠি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কোনো সাড়া মেলেনি।
কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স্বজল মোল্লা বলেন, "দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার জন্য কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মানুষের দুর্ভোগ কমাতে আমরা সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করব।"
এলাকাবাসী এখন সরকারি প্রতিশ্রুতির দ্রুত বাস্তবায়ন এবং এই অচলাবস্থা থেকে মুক্তির প্রহর গুনছেন।
What's Your Reaction?






