সেনাবাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে পিতা-পুত্রসহ গ্রেপ্তার 'জুনু'

শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা ভয়ংকর অপরাধী ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত 'জুনু' এবং তার বাবাকে এক সাঁড়াশি অভিযানে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী। এই অভিযানে জুনুর এক সহযোগীকেও আটক করা হয়, যা এলাকায় দীর্ঘদিনের আতঙ্ক ও ভয়ের পরিবেশের অবসান ঘটিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছে।
সোমবার (৪ আগস্ট) এই অভিযানের পর স্থানীয়দের মধ্যে স্বস্তির নিঃশ্বাস নেমে এসেছে।
জামগড়া এলাকায় এক অঘোষিত অধিপতি হয়ে উঠেছিল জুনু। তার অপরাধের ফিরিস্তি দীর্ঘ। স্থানীয়দের অভিযোগ অনুযায়ী, জুনু ও তার পরিবার প্রকাশ্যে অবৈধ লটারি ও জুয়ার আসর চালিয়ে আসছিল। মাদক ব্যবসার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রক হওয়ার পাশাপাশি অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি, ছিনতাই এবং মারামারি ছিল তাদের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। জুনুর বিরুদ্ধে অস্ত্রসহ গোলাগুলির একাধিক মামলাও রয়েছে।
তার এই পতনে এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি নেমে এলেও, এতদিন ধরে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে জমে থাকা ক্ষোভও বেরিয়ে এসেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, "আমরা রাস্তায় শান্তিতে চলতে পারতাম না। জুনু ও তার বাহিনীর অত্যাচারে সবসময় আতঙ্কে থাকতাম। আজ ওদের গ্রেপ্তার দেখে মনে হচ্ছে, কেউ আমাদের কথাও শুনেছে।"
আরেক ভুক্তভোগী বলেন, "জুনুর বিরুদ্ধে একাধিকবার অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি। প্রতিবারই সে কোনো এক অদৃশ্য শক্তির জোরে ছাড়া পেয়ে যেত। মনে হতো, কেউ একজন তাকে রক্ষা করছে।"
তবে এই গ্রেফতারের পর এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাকের ডগায় কীভাবে বছরের পর বছর ধরে এই অপরাধের সাম্রাজ্য চালিয়ে যাচ্ছিল জুনু ও তার পরিবার? প্রশাসনের ভেতরে কি তাদের কোনো মদদদাতা ছিল? তদন্তে কি নতুন কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম উঠে আসবে? —এসব প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণ মানুষের মনে।
অবশেষে সোমবার (৪ আগস্ট) সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সেনাবাহিনী জামগড়া এলাকায় এক সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে। এই অভিযানে জুনু, তার বাবা স্বপন এবং তাদের এক সহযোগীকে হাতেনাতে আটক করা হয়।
এই অভিযানের পর এলাকাবাসীর দাবি, শুধু জুনু ও তার পরিবার নয়, এই চক্রের নেপথ্যে থাকা সকল সহযোগীকে আইনের আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে, যারা এতদিন এই অপরাধী চক্রকে সহায়তা করেছে, তাদেরও মুখোশ উন্মোচন করে বিচারের মুখোমুখি করার জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
What's Your Reaction?






