সাইকেলে স্বপ্ন ছোঁয়ার গল্প; ২১০ কি.মি.

কুবি প্রতিনিধিঃ
Jun 8, 2025 - 23:13
 0  141
সাইকেলে স্বপ্ন ছোঁয়ার গল্প; ২১০ কি.মি.

এটা ছিল এক সাধারণ সকাল। সূর্য উঠেছিল প্রতিদিনের মতোই, তবে তিন তরুণের মনে ছিল অসাধারণ উত্তেজনা। আজ তারা রওনা দেবে এক অনন্য যাত্রায়—সাইকেল চালিয়ে ছুঁয়ে দেখবে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য, পাড়ি দেবে ২১০ কিলোমিটারের দীর্ঘ পথ। এই যাত্রায় তারা শুধু রাস্তাই অতিক্রম করবে না, অতিক্রম করবে নিজেদের সীমা, সাহস ও বন্ধুত্বের পরীক্ষাও।

দিলোয়ার হোসেন, আলি আকবর শুভ এবং মেহেদী হাসান রিফাত—তিন বন্ধুর মাথায় ঘুরছিল বহুদিনের এক স্বপ্ন। আগের ঈদের ছুটিতে সাইকেল নিয়ে দীর্ঘ সফরে বের হওয়ার পরিকল্পনা করলেও নানা ব্যস্ততায় তা হয়নি। এবারের ঈদে মিলল সুযোগ—তিনজনের মনজুড়ে তখন শুধু একটাই লক্ষ্য: পাহাড়, ঝর্ণা আর সীমান্ত ছুঁয়ে দেখা।

তাদের গন্তব্য নেত্রকোনার পাহাড়ি জনপদ চন্দ্রডিঙ্গা, দূরত্ব প্রায় ২১০ কিলোমিটার। ৩ জুন ২০২৫, সকালবেলা শুরু হয় পথচলা। পিছনে রেখে আসে চেনা শহর, সামনে শুধুই নতুন অভিজ্ঞতার ডাক।

প্রথম দিনের গন্তব্য ছিল নেত্রকোনার সিধলী ইউনিয়ন, যেখানে যাত্রাবিরতি হয়েছিল তাদের এক সিনিয়র রাকিবুল হাসানের বাড়িতে। প্রায় ১০০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে সে রাতে বিশ্রামের পাশাপাশি তারা পেয়েছিলেন এক মায়ের মমতাময় আতিথেয়তা। বাড়ির চারপাশে যেন এক স্বপ্নময় পরিবেশ—পানি ঘেরা দ্বীপের মতো বসতবাড়ি, সামনের আঙিনায় মরিচের ক্ষেত, পেছনে পুকুর, আশপাশে ফলের গাছ, আর আতিথেয়তায় ছিল প্রাণভরে রান্না করা খাবার। রাত ৪টায় উঠে রান্না করা আন্টির স্নেহ তারা আজীবন মনে রাখবেন।

পরদিন সকাল ৭টায় আবার শুরু হয় যাত্রা—এবার লক্ষ্য চন্দ্রডিঙ্গা পাহাড়, পাঁচগাঁও। সাইকেল চালিয়ে পাহাড় ছোঁয়ার যে অনুভূতি, তা ভাষায় বোঝানো কঠিন। সৌভাগ্যবশত সীমান্তে বিজিবির ডিউটি না থাকায় তারা ভারত সীমান্তসংলগ্ন এক ঝর্ণার শাখা পর্যন্ত পৌঁছে যান। ঝর্ণার শীতল জলে শরীর ভিজিয়ে তারা যেন নতুন করে জীবন ফিরে পেলেন।

তবে ফিরতি পথ ছিল সত্যিকারের চ্যালেঞ্জ। শরীরের শক্তি তখন প্রায় নিঃশেষ, পিঠ আর কোমর অবশ। কিন্তু বন্ধুত্বের বন্ধনে বাঁধা তিনজন কেউ কাউকে থামতে দেননি। প্রতি ১০–১৫ কিলোমিটারে বিশ্রাম, কেউ ক্লান্ত হলে অন্যজন তার সাইকেল ঠেলে নিয়েছে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা, তারপর রাত—শেষমেশ রাত ১১টায় তারা ফিরলেন বাড়ি, চোখে মুখে বিজয়ের হাসি।

এই যাত্রা ছিল প্রকৃতির সঙ্গে এক গভীর সংলাপ, ছিল আত্মজয়ের এক নিঃশব্দ ঘোষণা।

দিলোয়ার হোসেন বলেন, “এই অভিজ্ঞতা শুধু আমাদের ক্লান্ত করেনি, আমাদের বড় করেছে। নিজেদের ভেতরে যে শক্তি ছিল, সেটা আমরা খুঁজে পেয়েছি এই দুই দিনে।”

আজকের দিনে, যখন প্রযুক্তির দৌড়ে মানুষ ক্লান্ত, তখন তিন তরুণ দেখিয়ে দিয়েছেন—স্বপ্ন ছোঁয়ার জন্য প্রযুক্তি নয়, দরকার সাহস, বন্ধুতা, আর একটুখানি ইচ্ছাশক্তি। রাস্তায় নয়, মনেই তৈরি হয় পাহাড় জয় করার দৃঢ়তা।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow