বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত দিদারুলের সম্মানে স্তব্ধ নিউইয়র্ক

নিউইয়র্কের রাজপথ ঢেকে গিয়েছিল শোকে। ইউনিফর্মের সারি, জনতার ভিড় আর পতাকায় মোড়ানো কফিন—সব মিলিয়ে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত বাংলাদেশি-আমেরিকান পুলিশ কর্মকর্তা (এনওয়াইপিডি) দিদারুল ইসলামকে এভাবেই অশ্রুসিক্ত বিদায় জানালো নিউইয়র্ক। পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) তাকে সমাহিত করা হয়।
ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টার জামে মসজিদের বাইরে হাজারো শোকার্ত মানুষের উপস্থিতিতে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। জানাজার নামাজের ঠিক আগে, নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ তাকে মরণোত্তর "প্রথম শ্রেণির গোয়েন্দা" (Detective First Grade) পদে পদোন্নতি দেয়। তার আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এনওয়াইপিডির ফেসবুক পেজে লেখা হয়, "তিনি এই শহরকে রক্ষা করার জন্য সবকিছু দিয়েছেন... আমরা কখনোই ভুলব না। ডিটেকটিভ ইসলামের স্মৃতি এনওয়াইপিডির প্রতিটি অফিসারের হৃদয়ে বেঁচে থাকবে।"
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মেঘাচ্ছন্ন আকাশ আর তীব্র গরম উপেক্ষা করে দিদারুলের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় নিউইয়র্কের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন তার সহকর্মী, বিভিন্ন কমিউনিটির সদস্য, স্থানীয় নেতা এবং নগর কর্মকর্তারা। মসজিদের চারপাশের রাস্তায় নেমে আসে শুনশান নীরবতা। ইউনিফর্মধারী কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সাধারণ অভিবাসী—সকলেই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানান শহরের এই বীর সন্তানকে। জানাজার নামাজ শেষ হতেই আকাশ ভেঙে নামে বৃষ্টি, যেন প্রকৃতিও কাঁদছিল তার বিদায়ে।
পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশ বলেন, "দিদারুল ইসলাম এই দেশে একজন অভিবাসী হিসেবে এসেছিলেন। তার জীবনের কোনো গ্যারান্টি ছিল না। শুধু আশা ছিল যে কঠোর পরিশ্রম আর বিনয় দিয়ে জীবনকে এক অর্থপূর্ণ জায়গায় নিয়ে যাবেন, এবং তিনি তা পেরেছিলেন।"
দিদারুল মাত্র সাড়ে তিন বছর নিউইয়র্ক পুলিশে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে তিনি একজন স্কুল নিরাপত্তা এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন। স্ত্রী জামিলা আক্তার, পাঁচ ও সাত বছর বয়সী দুই ছেলে এবং বাবা-মাকে নিয়ে ব্রঙ্কসের একটি সাধারণ বাড়িতে থাকতেন তিনি। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তার অনাগত তৃতীয় সন্তানের পৃথিবীর আলো দেখার কথা।
শোকাহত পরিবারের পাশে বসে থাকা মেয়র এরিক অ্যাডামসসহ শহর ও রাজ্যের শীর্ষ নেতারা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। মসজিদের ভেতরে দিদারুলের কফিনটি এনওয়াইপিডির সবুজ-সাদা-নীল পতাকা এবং একটি বিশাল মার্কিন পতাকায় মোড়ানো ছিল। সেখানে বাংলা ও ইংরেজিতে ভেসে আসছিল প্রার্থনার সুর। ইউনিফর্মধারী কর্মকর্তারাও শোকাহত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কাঁদছিলেন।
সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে, ছয়জন অফিসার কফিনটি কাঁধে করে বের করে আনেন। একটি সুসজ্জিত গাড়িতে করে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় নিউ জার্সির কবরস্থানের দিকে। শোকযাত্রাটি যখন ৬ নম্বর ট্রেন লাইনের নিচ দিয়ে যাচ্ছিল, তখন ম্যানহাটনগামী একটি ট্রেন শোকাবহ হর্ন বাজিয়ে যেন শেষ সালাম জানালো শহরের এই বীর সন্তানকে।
What's Your Reaction?






