নিজেকে ‘বিএনপি কর্মী’ দাবি করে আওয়ামী লীগের পদ ছাড়লেন নেতা

জাকির হোসেন, স্টাফ রিপোর্টারঃ
Sep 3, 2025 - 20:39
 0  14
নিজেকে ‘বিএনপি কর্মী’ দাবি করে আওয়ামী লীগের পদ ছাড়লেন নেতা

নিজের অজান্তেই কি কেউ একটি রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা হয়ে যেতে পারেন? শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও ফরিদপুরের সালথায় ঠিক এমনটাই ঘটেছে বলে দাবি করেছেন নূরুদ্দীন মাতুব্বর। উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে থেকেও যিনি নিজেকে ‘বিএনপির লোক’ বলে ঘোষণা দিয়ে পদত্যাগ করেছেন, সেই বিরল ঘটনাই এখন সালথার প্রধান রাজনৈতিক আলোচনার বিষয়।

বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের মাদ্রাসা গট্টি এলাকায় এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে এই বিস্ফোরক ঘোষণা দেন তিনি। স্থানীয় সাংবাদিক ও দলীয় নেতাকর্মীদের সামনে রেখে নূরুদ্দীন মাতুব্বর দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেন, "কে বা কারা আমাকে উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে রেখেছে, আমি জানি না। আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে কোনো দিন জড়িত ছিলাম না।"

নিজের রাজনৈতিক পরিচয় স্পষ্ট করে তিনি বলেন, "আমি ১৯৮৬ সাল থেকে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। প্রয়াত কে এম ওবায়দুর রহমান ছিলেন আমার রাজনৈতিক গুরু। আমি তার নেতৃত্বে কাজ করেছি। অথচ আমার নাম ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের কমিটিতে পদ দিয়ে আমাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। তাই আমি স্পষ্টভাবে জানাতে চাই—আমি বিএনপির কর্মী ছিলাম, আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকব।"

এ সময় আবেগঘন কণ্ঠে নূরুদ্দীন মাতুব্বর অভিযোগ করে বলেন, "আওয়ামী লীগের চাপে আমি বহু হামলা ও মামলার শিকার হয়েছি, মিথ্যা মামলায় জেল খেটেছি। আমাকে চাপে ফেলে তাদের দলে নাম লেখানো হয়েছে। অথচ আমি কখনো আওয়ামী লীগ করিনি। আমার রাজনৈতিক গুরু প্রয়াত কে এম ওবায়দুর রহমান একাধিকবার আমার বাড়িতে এসেছেন, আমাদের বাড়িতে খেয়েছেন।"

তিনি আরও অভিযোগ করেন, "একটি কুচক্রী মহল আমাকে আওয়ামী লীগের নেতা বানিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করছে। এর মাধ্যমে আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করার চেষ্টা চলছে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং আপনাদের কাছে বিচার চাই। আজ থেকে আওয়ামী লীগের কোনো কমিটিতে আমার নাম থাকলে তা প্রত্যাহার করলাম।"

বর্তমানে গট্টি ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত সদস্য নূরুদ্দীন মাতুব্বরের এই ঘোষণায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির এক নেতা তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করলেও, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, নূরুদ্দীনকে বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে। তবে এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সংবাদ সম্মেলনে নূরুদ্দীনের সমর্থনে নুর আলম, ইউনুস মোল্লা, সাবান খান, ইসহাক মাতুব্বর, সায়েদ মীর, আফতার খান, শুকুর খান, পাঞ্জু মাতুব্বরসহ কয়েক শতাধিক স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন, যা ঘটনাটিকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। তার এই পদত্যাগ এবং বিস্ফোরক মন্তব্য আগামী দিনে সালথার রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলে দেবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow