দুদকের কঠিন প্রশ্নের মুখে সাংবাদিক মুন্নী সাহা

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং ব্যাংক হিসাবে ১৩৪ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগের পাহাড়ে চাপা পড়া দেশের সাংবাদিক মুন্নী সাহা অবশেষে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়েছেন। বুধবার (৩০ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির উপসহকারী পরিচালক সাবেকুল নাহার পারুলের নেতৃত্বে একটি বিশেষ টিম তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে।
এই জিজ্ঞাসাবাদ এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন মুন্নী সাহা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। বিশেষ করে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পরপরই তার বিভিন্ন হিসাব থেকে তড়িঘড়ি করে ১২০ কোটি টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ তদন্তে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, গত ২ জানুয়ারি মুন্নী সাহার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি। তদন্তের অংশ হিসেবে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ জুলাই আদালত মুন্নী সাহা ও তার স্বামী কবির হোসেনের নামে থাকা ৩৩টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করার আদেশ দেন। জানা যায়, ফ্রিজ করার সময় ওই হিসাবগুলোতে স্থিতি ছিল মাত্র ১৮ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এর আগে গত ৩ জুন একই আদালত মুন্নী সাহা, তার মা, স্বামী কবির হোসেন এবং দুই ভাই তপন কুমার সাহা ও প্রণব কুমার সাহার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
তদন্তে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে যে, ফ্রিজ হওয়া ৩৩টি ব্যাংক হিসাবের কয়েকটিতে এটিএন নিউজের ক্যামেরাম্যান তপন কুমার সাহা ও তার মা আপেল রানী সাহার সঙ্গে মুন্নী সাহার যৌথ মালিকানা রয়েছে। বিধিবহির্ভূত ও সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে মুন্নী সাহার ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো এর আগেই জব্দ করেছিল বাংলাদেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ)।
বিএফআইইউ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে উঠে আসে, বেসরকারি ওয়ান ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখায় মুন্নী সাহার স্বামী কবির হোসেনের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ‘এমএস প্রমোশন’-এর নামে ২০১৭ সালে একটি হিসাব খোলা হয়, যেখানে নমিনি হিসেবে মুন্নী সাহার নাম রয়েছে। মূলত ১৭টি ব্যাংকের মাধ্যমে এই বিপুল পরিমাণ অর্থের লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে, যার মধ্যে ওয়ান ব্যাংকের মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
দুদকের কর্মকর্তারা বলছেন, মুন্নী সাহার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো অত্যন্ত গুরুতর। তার ব্যাংক হিসাব থেকে উত্তোলিত বিপুল পরিমাণ অর্থ কোথায় গেল, সম্পদের উৎস কী এবং এই লেনদেনের সঙ্গে আর কারা জড়িত, তা খুঁজে বের করতেই আজকের এই জিজ্ঞাসাবাদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
What's Your Reaction?






