এক নারীর দাপটে ৪ মাস জলবন্দি শতাধিক পরিবার

মোঃ কামরুজ্জামান, লামা প্রতিনিধি, বান্দরবানঃ
Aug 4, 2025 - 18:22
 0  3
এক নারীর দাপটে ৪ মাস জলবন্দি শতাধিক পরিবার

সরকারি ড্রেন ও কালভার্ট দখল করে পাকা স্থাপনা নির্মাণ, আর তার জেরে দীর্ঘ চার মাস ধরে পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে শতাধিক পরিবার। এই অচলাবস্থার পেছনে এক প্রভাবশালী নারীর স্বেচ্ছাচারিতাকে দায়ী করছেন ভুক্তভোগীরা, আর তাদের অভিযোগ, প্রশাসন সবকিছু দেখেও রহস্যজনকভাবে নীরব।

ঘটনাটি বান্দরবানের লামা পৌরসভার প্রবেশমুখ নয়াবাজার এলাকার। সরেজমিনে দেখা যায়, সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা দখল করে এবং পৌরসভার একটি প্রধান ড্রেন বন্ধ করে দিয়ে বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন এক উপজাতি নারী। এর ফলে পৌরসভার অর্থায়নে নির্মিত একটি আরসিসি সংযোগ সড়ক ও আশপাশের এলাকা পানিতে ডুবে আছে। শহরের প্রধান সড়কে পানি জমে কার্পেটিং নষ্ট হওয়ায় যান ও পথচারী উভয়েরই যোগাযোগে চরম ভোগান্তি হচ্ছে।

এই জলবন্দি দশা থেকে মুক্তি পেতে ভুক্তভোগী অর্ধশতাধিক পরিবার গত চার মাস ধরে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো প্রতিকার পায়নি। অবশেষে, সম্প্রতি তারা রাস্তায় নেমে মানববন্ধন করে। এসময় তারা জলাবদ্ধতা নিরসনে দুই সপ্তাহের আল্টিমেটাম দেয়। এর মধ্যে সমস্যার সমাধান না হলে আগামী ১৬ আগস্ট সড়কে অবস্থান ধর্মঘট করার কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

ভুক্তভোগীরা জানান, তাদের এই প্রতিবাদের পর অভিযুক্ত নারী আরও ক্ষিপ্ত হয়েছেন। তিনি নিজেকে বিচার বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বড় কর্মকর্তাদের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে প্রতিবাদকারীদের নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই নারী যে জমিতে স্থাপনা নির্মাণ করছেন, তার মালিকানা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। অভিযোগ আছে, তার সাবেক স্বামী জোরপূর্বক অন্যের জমি দখল করে স্ত্রীর নামে দলিলের ব্যবস্থা করে দেন। এখন সেই জমিতে স্থাপনা নির্মাণের পাশাপাশি তিনি সরকারি সড়কের জায়গাও দখল করেছেন।

এই চরম জনদুর্ভোগের বিষয়ে জানতে চাইলে লামা পৌর প্রশাসক মোঃ মঈন উদ্দিন এক অদ্ভুত যুক্তি দিয়ে বলেন, "কারও খতিয়ানের জায়গায় মালিক অনুমতি না দিলে পৌরসভা ড্রেন করতে পারে না।" সড়কের জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিষয়টি প্রকৌশল বিভাগের উপর চাপিয়ে দিয়ে বলেন, "তারা ব্যবস্থা নেবেন।" তবে, পৌরসভার প্রকৌশলীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে, বান্দরবান সড়ক ও জনপথ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বারবার "সরেজমিন দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার" আশ্বাস দিলেও, গত চার মাসেও তাদের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, লামার বিষয়ে সওজ কর্তৃপক্ষ বরাবরই উদাসীন।

পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, স্থানীয়রা বলছেন, লামায় যেন 'রাম রাজত্ব' চলছে। যে যার মতো আইন লঙ্ঘন করে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় চরম বিঘ্ন ঘটাচ্ছে, অথচ দেখার যেন কেউ নেই। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো এখন ১৬ আগস্টের দিকে তাকিয়ে আছে, প্রশাসনের ঘুম ভাঙাতে শেষ পর্যন্ত তাদের হয়তো রাস্তাতেই নামতে হবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow