শাহবাগ দখল করে শেখ হাসিনাকে ফেরানোর ‘ষড়যন্ত্র’ ফাঁস

বিদেশে লোক পাঠানোর নাম করে কনভেনশন হল ভাড়া, অতঃপর শত শত নেতাকর্মী নিয়ে রাজধানীর শাহবাগ দখলের মাধ্যমে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির এক চাঞ্চল্যকর ষড়যন্ত্রের তথ্য ফাঁস করেছে পুলিশ। এই পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে একজন সেনা মেজরসহ ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) জানিয়েছে, গত ৮ জুলাই বসুন্ধরার একটি কনভেনশন সেন্টারে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা এবং ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের প্রায় তিন থেকে চারশ নেতাকর্মী এক গোপন বৈঠকে মিলিত হন। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলা এই বৈঠকের নেপথ্যের পরিকল্পনা ছিল অত্যন্ত ভয়াবহ।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শামীমা নাসরিন শম্পা নামে এক নারী বিদেশে লোক পাঠানোর একটি প্রতিষ্ঠানের নামে কনভেনশন হলটি ভাড়া নেন, যা ছিল মূলত একটি আবরণ। বৈঠকের মূল পরিকল্পনা ছিল, "সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সারাদেশ থেকে লোকজনকে ঢাকায় জড়ো করা হবে। এরপর সকলে মিলে শাহবাগ মোড় দখল করে রাজধানী অচল করে দেওয়া হবে এবং জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা হবে।"
এই ষড়যন্ত্রমূলক বৈঠকের তথ্য পেয়ে পুলিশ তৎপর হয় এবং গত ১৩ জুলাই ভাটারা থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করে। এ মামলায় এখন পর্যন্ত ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যারা বর্তমানে কারাগারে আছেন।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান গতকাল শুক্রবার বলেন, "আমরা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। এর প্রকৃত রহস্য কী এবং এর পেছনে আর কারা কারা দায়ী, তাদের পরিচয় শিগগিরই উন্মোচন করা হবে।" তিনি আরও জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
অন্যদিকে, এই ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে মেজর সাদিক নামে একজন সেনা কর্মকর্তাকে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। আইএসপিআর জানিয়েছে, গত ১৭ জুলাই ওই কর্মকর্তাকে আটক করা হয় এবং প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য একটি তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে এবং সেনা আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এই ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে এবং একটি বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা নস্যাৎ করা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
What's Your Reaction?






