ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ইতিহাস গড়লেন দুই সাঁতারু

খেলা ডেস্কঃ
Jul 30, 2025 - 13:16
 0  1
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ইতিহাস গড়লেন দুই সাঁতারু

দীর্ঘ তিন যুগেরও বেশি সময়ের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে উত্তাল ইংলিশ চ্যানেলের বুকে আবারও উড়ল বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা। দুঃসাহসিক এক কীর্তি গড়ে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিলেন দুই অদম্য সাঁতারু—পাবনার মাহফিজুর রহমান সাগর এবং কিশোরগঞ্জের নাজমুল হক হিমেল। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই), প্রায় ১২ ঘণ্টা ১০ মিনিটের এক অবিরাম সাঁতারের মহাকাব্য রচনা করে তারা পাড়ি দেন বিশ্বের অন্যতম দুর্গম এই জলপথ।

কনকনে ঠাণ্ডা পানি, প্রতিকূল স্রোত আর আবহাওয়ার চরম অনিশ্চয়তাকে জয় করে এই দুই সাঁতারু তাদের যাত্রা সম্পন্ন করেন। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে তাদের চূড়ান্ত অভিযান কয়েকবার পিছিয়ে যায়। জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহে সাঁতারের জন্য নির্ধারিত সময় থাকলেও প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে ২৯ জুলাই তারা নামেন সেই ঐতিহাসিক অভিযানে। ১২ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে শারীরিক ও মানসিক শক্তির চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়ে সাগর ও হিমেল প্রমাণ করেছেন, অদম্য ইচ্ছা থাকলে কোনো বাধাই বাধা নয়।

এই সাফল্যের মাধ্যমে সাগর ও হিমেল নিজেদের নাম লেখালেন কিংবদন্তিদের কাতারে। তাদের আগে মাত্র তিনজন বাংলাদেশি এই গৌরব অর্জন করেছিলেন। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬১ সালের মধ্যে ছয়বার ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ইতিহাস গড়েছিলেন প্রথম এশীয় সাঁতারু, কিংবদন্তী ব্রজেন দাস। এরপর ১৯৬৫ সালে আবদুল মালেক এবং সর্বশেষ ১৯৮৭ সালে মোশাররফ হোসেন এই চ্যানেল জয় করেন। দীর্ঘ ৩৭ বছরের দীর্ঘ এক খরা কাটিয়ে সাগর ও হিমেলের এই সাফল্য বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করল।

ইংলিশ চ্যানেলকে প্রায়শই "সাঁতারুদের মাউন্ট এভারেস্ট" বলা হয়। এর মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৫৬০ কিলোমিটার হলেও, সাঁতারুরা সাধারণত ফ্রান্সের ক্যালে থেকে ইংল্যান্ডের ডোভার পর্যন্ত এর সবচেয়ে সংকীর্ণ অংশটি (স্ট্রেইট অব ডোভার) পাড়ি দেন, যার দূরত্ব সরলরেখায় প্রায় ৩৪ কিলোমিটার। কিন্তু তীব্র স্রোতের কারণে সাঁতারুদের প্রায়ই ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত পথ অতিক্রম করতে হয়, যা এটিকে বিশ্বের অন্যতম কঠিন পরীক্ষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

সাগর ও হিমেলের এই অর্জন শুধু একটি ব্যক্তিগত সাফল্যই নয়, এটি সমগ্র জাতির জন্য এক বিশাল গৌরবের বিষয়। তাদের এই কীর্তি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বড় স্বপ্ন দেখতে এবং দুঃসাহসিক অভিযানে অনুপ্রাণিত করবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow