ফরিদপুরে আইনজীবী মোসাদ্দেক আহমেদ বশিরের দাফন সম্পন্ন
ফরিদপুরের সরকারি এজিপি ও ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সদস্য অ্যাডভোকেট মোসাদ্দেক আহমেদ বশিরের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার (২৭ অক্টোবর) সকালে দুই দফা জানাজা শেষে ফরিদপুর শহরের আলীপুর কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় সকাল সাড়ে ১০টায় ফরিদপুর জেলা আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে। এ সময় ফরিদপুর বারের শতাধিক আইনজীবী ছাড়াও মরহুমের সহকর্মী, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজন, রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও অসংখ্য সাধারণ মানুষ অংশ নেন। জানাজা শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন ফরিদপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি, ফরিদপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীরসহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ। তারা মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয় মমিনখার হাট বাজার জামে মসজিদ সংলগ্ন মাধবদিয়া ময়েজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। সেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও আইনজীবীরা অংশ নেন। জানাজা শেষে মরদেহ আলীপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এর আগে রোববার (২৬ অক্টোবর) সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে ফরিদপুর শহরের নিকটবর্তী বদরপুর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান অ্যাডভোকেট মোসাদ্দেক আহমেদ বশির। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে পুরো ফরিদপুরে নেমে আসে শোকের ছায়া।
নিহতের সহযাত্রী আইনজীবী মজিবর জানান, তারা মোটরসাইকেলে করে কানাইপুর থেকে ফিরছিলেন। এ সময় একটি কাভার্ড ভ্যান ওভারটেক করতে গিয়ে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে দু’জনই রাস্তায় ছিটকে পড়েন। “আমি হাতে-পায়ে আঘাত পাই, কিন্তু বশির স্যার মাথায় গুরুতর আঘাত পান। তার নাক, কান ও মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে,” বলেন তিনি। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ফরিদপুরের ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মোসাদ্দেক বশিরকে মৃত ঘোষণা করেন।
জানা গেছে, মোসাদ্দেক আহমেদ বশির ফরিদপুর পৌর জামায়াতে ইসলামীর যুব বিভাগের সভাপতি ছিলেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে সাংবাদিকতায় যুক্ত হন তিনি। পড়াশোনা শেষে ঢাকায় সাংবাদিকতা শুরু করলেও পরবর্তীতে আইনপেশায় যুক্ত হন। পরে সরকারি এজিপি হিসেবে দায়িত্ব পান।
মরহুমের বড় বোন, তিন ভাই ও বাবা-মায়ের পাশাপাশি তিনি স্ত্রী এবং তিন কন্যা সন্তান রেখে গেছেন। তার বড় মেয়ের বয়স সাড়ে ছয় বছর, মেঝো মেয়ের দুই বছর এবং ছোট মেয়ের বয়স মাত্র ছয় মাস।
সহকর্মী আইনজীবীরা জানান, মোসাদ্দেক আহমেদ বশির ছিলেন বিনয়ী, সহৃদয় ও ন্যায়ের প্রতি অনুগত একজন মানুষ। তিনি কখনো মামলার ফি চেয়ে নিতেন না; যা পেতেন, তা হাসিমুখে গ্রহণ করতেন। গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ানো, সালিশের মাধ্যমে বিরোধ মীমাংসা করা এবং সর্বদা হাসিমুখে কথা বলাই ছিল তার স্বভাব। সবাই তাকে একজন “ভালো মানুষ” হিসেবে স্মরণ করছেন।
ফরিদপুরের মানুষের কাছে অ্যাডভোকেট মোসাদ্দেক আহমেদ বশিরের মৃত্যু শুধু একজন আইনজীবী নয়, একজন মানবিক মানুষকে হারানোর শোক বয়ে এনেছে।
What's Your Reaction?
জেলা প্রতিনিধি, ফরিদপুরঃ