ফরিদপুরে মন্দিরের গাছ কেটে বিক্রি, কথিত যুবদল নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ
ফরিদপুর সদরের একটি প্রাচীন কালী মন্দিরের মেহগনি গাছ কেটে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে কথিত যুবদল নেতা সাইফুল মোল্লার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় মন্দির কমিটি ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।
ফরিদপুর সদর উপজেলার মাচ্চর ইউনিয়নের খলিলপুর বাজার সংলগ্ন বারোনীখোলা কালী মন্দিরটি ব্রিটিশ আমল থেকে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উপাসনার কেন্দ্র। প্রতিবছর চৈত্র তিথিতে এ মন্দির প্রাঙ্গণে বারোনী মেলার আয়োজন হয়।
মন্দির কমিটির অভিযোগ, মন্দিরের প্রাঙ্গণে থাকা বড় একটি মেহগনি গাছ গত বুধবার মাত্র ২৩ হাজার টাকায় জোরপূর্বক কেটে বিক্রি করেন কথিত যুবদল নেতা সাইফুল মোল্লা। বাধা দেওয়া সত্ত্বেও তিনি গাছ কাটা বন্ধ করেননি। বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গাছ কেটে জায়গাটি মাটি দিয়ে ভরাট করে রাখা হয়েছে।
মন্দির কমিটির সভাপতি সত্য রঞ্জন মালো জানান, “আমাদের পূর্বপুরুষের সময় থেকে এই মন্দিরে পূজা হয়ে আসছে। নবাব সিরাজউদ্দৌলার সময়ের কথাও আমরা শুনেছি। গাছটি আমার পূর্বপুরুষ লাগিয়েছিলেন, এটি ভক্তদের বিশ্রামের স্থান ছিল। সাইফুল মোল্লা জোর করে গাছটি কেটে নিয়ে গেছেন। এখন উল্টো আমাদের হুমকি দিচ্ছেন।”
তিনি আরও জানান, মন্দিরের ২ শতাংশ জমি জেলা প্রশাসকের মালিকানায় থাকলেও সেটি সরকারি নথিতে ‘মন্দির’ হিসেবে উল্লেখ আছে। এ জমি মন্দির কমিটির নামে লিখে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান।
স্থানীয় বাসিন্দা সুমির কুমার ঘোষ বলেন, “সাইফুল মোল্লা বিএনপির নাম ভাঙিয়ে এলাকায় নানা অপকর্ম করে। তার ভয়ে কেউ মুখ খোলে না।”
সাইফুল মোল্লার চাচাতো ভাই ও জমিদাতার ওয়ারিশ মো. মাহফুজ মোল্লা বলেন, “গাছটি মন্দিরের জায়গায় ছিল। সাইফুল মোল্লাদের ওই দাগে আর কোনো জমি নেই। তবুও সে জোর করে গাছ কেটে নিয়েছে।”
মাচ্চর ইউনিয়ন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এস. এ. মামুনুর রশিদ বলেন, “সাইফুল মোল্লার কাজটি অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। সে যুবদলের কেউ নয়, বরং দীর্ঘদিন আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। জেলা বিএনপির কাছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানানো হবে।”
তবে ইউনিয়নের স্থানীয় ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার রশিদ মোল্লা দাবি করেন, “যে গাছ কাটা হয়েছে, তা মন্দিরের জায়গায় নয়; মোল্লা পরিবারের জায়গায় ছিল।”
অভিযুক্ত সাইফুল মোল্লা বলেন, “গাছটি মন্দিরের নয়। আমার চাচা মনি মোল্লার জায়গায় ছিল। গাছটি আমার বাবাই লাগিয়েছিলেন। মন্দির কমিটির করা মামলার খরচ চালাতে গাছটি কেটেছি।”
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার এএসআই জিয়াউর রহমান জানান, “এ বিষয়ে আমরা একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
What's Your Reaction?
জেলা প্রতিনিধি, ফরিদপুরঃ