অভাব জয় করে পুলিশের কনস্টেবলে ২৩ জন: বাবার ঘাম ঝরানো স্বপ্ন পূরণের সারথি ওরা

অভাবের সংসারে বড় হওয়া মাহিন্দ্রা চালক বাবার মেয়ে তন্দ্রা আক্তারী (১৮) এখন বাংলাদেশ পুলিশের সদস্য। পরিবারের আর্থিক সংকট আর সমাজের নানা কথা-বার্তার মাঝেও তিনি নিজের মেধা ও যোগ্যতার জোরে ট্রেইনি কনস্টেবল পদে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
ফরিদপুর পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসে কনস্টেবল পদে ফরিদপুর থেকে আবেদন করেন ১ হাজার ২১১ জন। বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন ৩৪৩ জন, এর মধ্যে উত্তীর্ণ হন ২৮ জন। পরবর্তী মৌখিক পরীক্ষায় ২৩ জনকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয়। পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিল বলেন, “প্রত্যেকেই মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছে।”
এই ২৩ জনের মধ্যে তন্দ্রা আক্তারী একমাত্র নারী কনস্টেবল। তিনি ফরিদপুর সদর উপজেলার ঘনশ্যামপুর গ্রামের মাহিন্দ্রা চালক তোরাব বিশ্বাসের মেয়ে। মেয়ের এমন সাফল্যে খুশি বাবা-মা ও আত্মীয়-স্বজন।
আবেগাপ্লুত তন্দ্রা আক্তারী বলেন, “একজন মাহিন্দ্রা চালকের মেয়ে পুলিশে চাকরি মানে অনেক কিছু। মানুষ বলেছিল টাকা ছাড়া পুলিশে চাকরি হয় না। আমার বাবার পক্ষে ৮/১০ লাখ টাকা দিয়ে চাকরি দেওয়া সম্ভব ছিল না। কিন্তু আমার যোগ্যতার মূল্যায়ন হয়েছে, মাত্র ২২০ টাকায় চাকরিটা হয়েছে। একজন পুলিশ সদস্য হিসেবে বাবার পাশে দাঁড়াতে পেরে আমি গর্বিত।”
মঙ্গলবার দুপুরে ফরিদপুর পুলিশ লাইনসে দেখা যায়, নির্বাচিতদের ভিড়ে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি ট্রাক চালকের ছেলে তামীম মন্ডলও। তিনি রঘুনন্দন এলাকার ট্রাকচালক সুমন মন্ডলের ছেলে। বাবার কষ্টের গল্প শোনাতে শোনাতে তিনি বলেন, “মাত্র ২২০ টাকায় চাকরি পাওয়া আর বাবার স্বপ্ন পূরণ—এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আনন্দ।”
নির্বাচিতদের গল্পের বেশিরভাগই সংগ্রাম ও বঞ্চনার সাথে জড়িয়ে। যেমন সিয়াম মোল্যা। তিনি মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন বন্ধুর পোশাক ধার করে। কৃষিশ্রমিক বাবার সঙ্গে মাঠে কাজ করে পড়ালেখা করেছেন তিনি। সিয়াম বলেন, “ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন ছিল পুলিশ হওয়ার। আজ আমার বাবার কষ্ট আর আমার মেধার মূল্যায়ন হয়েছে।”
পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিল আরও বলেন, “পুলিশের নিয়োগ নিয়ে নানা সময় অভিযোগ ওঠে। কিন্তু ফরিদপুরে এবার মেধা ও যোগ্যতাকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। কারও পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড নয়, সবার মেধা যাচাই করেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।”
অভাবের সঙ্গে লড়াই করে এগিয়ে আসা এই ২৩ জন তরুণ-তরুণী শুধু নিজেদের নয়, বাবার ঘাম ঝরানো স্বপ্নকেও জয় করেছেন।
What's Your Reaction?






