এনসিপিতেই যোগ দিচ্ছেন মাহফুজ–আসিফ

অনলাইন ডেস্কঃ
Dec 15, 2025 - 14:31
 0  3
এনসিপিতেই যোগ দিচ্ছেন মাহফুজ–আসিফ
ছবি : সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে ঘিরে রাজনীতিতে নতুন সমীকরণের আভাস মিলছে। তাঁরা কোন রাজনৈতিক দলে যুক্ত হচ্ছেন—এ নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে আলোচনা চললেও এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নামই সবচেয়ে বেশি আলোচনায়। দলটির একাধিক শীর্ষ নেতা ও মাহফুজ–আসিফের ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই তাঁরা এনসিপিতে যোগ দিতে পারেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মাহফুজ ও আসিফ এনসিপিতে যুক্ত হলে তাঁদের দায়িত্ব নিয়েও আলোচনা চলছে। মাহফুজ আলমকে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক পদে আনার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হচ্ছে। আর আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সদস্যসচিব পদমর্যাদার দায়িত্ব পেতে আগ্রহী বলে জানা গেছে। যদিও এ বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয়নি।

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেনসহ দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা একাধিকবার জানিয়েছেন, মাহফুজ ও আসিফকে দলে স্বাগত জানাতে তারা প্রস্তুত। এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদের জন্য এনসিপির দরজা সব সময় খোলা। তাঁরা চাইলে যেকোনো সময় দলে আসতে পারেন। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিপির এক নেতা জানান, আগামী এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই মাহফুজ–আসিফের এনসিপিতে যোগ দেওয়ার বিষয়ে ঘোষণা আসতে পারে। তাঁর ভাষ্য, তাঁরা কয়েক দিন আগে অন্তর্বর্তী সরকার থেকে পদত্যাগ করেছেন; এরপরই রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার পথে।

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পর মাহফুজ ও আসিফ আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আসিফ মাহমুদ ইতিমধ্যে ঢাকা–১০ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। আর মাহফুজ আলম লক্ষ্মীপুর–১ আসন থেকে প্রার্থী হওয়ার পরিকল্পনা করছেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানিয়েছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এনসিপি এখন পর্যন্ত এই দুটি আসনে কোনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি। দলটি ১২৫টি আসনের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করলেও ঢাকা–১০ ও লক্ষ্মীপুর–১ আসন খালি রাখা হয়েছে। অনেকের ধারণা, মাহফুজ ও আসিফের কথা বিবেচনায় রেখেই এ দুটি আসনে প্রার্থী দেওয়া হয়নি।

মাহফুজ আলম, আসিফ মাহমুদ এবং এনসিপির নেতাদের মধ্যে রাজনৈতিক ও আন্দোলনের অভিন্ন ইতিহাস রয়েছে। তাঁরা সবাই জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হিসেবে নেতৃত্ব দেন। এনসিপির অনেক নেতা মাহফুজ আলমকে আন্দোলনের ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবেও বিবেচনা করেন।

চব্বিশের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয়। শুরু থেকেই নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মাহফুজ আলম গত বছরের ২৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ পান এবং ১০ নভেম্বর উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন। চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি নাহিদ ইসলাম পদত্যাগ করেন। এরপর ২৮ ফেব্রুয়ারি তাঁর নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করে এনসিপি। তবে সরকারের অংশ হওয়ায় মাহফুজ–আসিফ তখন দলে যোগ দেননি। গত ১০ ডিসেম্বর তাঁরা অন্তর্বর্তী সরকার থেকে পদত্যাগ করেন।

এরপর তাঁদের বিএনপি বা গণঅধিকার পরিষদে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত এনসিপিতেই তাঁরা যোগ দিতে যাচ্ছেন বলে একাধিক সূত্রের দাবি।

এনসিপির নেতারা মনে করছেন, মাহফুজ ও আসিফ দলে এলে রাজনৈতিক কৌশলেও পরিবর্তন আসতে পারে। বিশেষ করে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা নতুনভাবে আলোচনায় আসবে। মাহফুজ–আসিফ দুজনেই চান, এনসিপি বিএনপির সঙ্গে সমন্বয় করে নির্বাচনে অংশ নিক। সে ক্ষেত্রে আন্দোলন-পরবর্তী রাজনীতিতে তরুণ নেতৃত্ব ও বড় দলগুলোর সমন্বয়ে এনসিপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।

সব মিলিয়ে মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পরবর্তী সিদ্ধান্ত শুধু এনসিপির জন্য নয়, বরং দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক অঙ্গনের জন্যই তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠছে। তাঁদের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার দিকেই এখন তাকিয়ে রয়েছে রাজনৈতিক মহল।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow