গাজায় ঘূর্ণিঝড় বায়রনের আঘাত, প্লাবিত তাঁবুতে মানবিক বিপর্যয়ের শঙ্কা
ঘূর্ণিঝড় বায়রন গাজার ফিলিস্তিনিদের ওপর নতুন দুর্ভোগ বয়ে এনেছে। শীতকালীন এই শক্তিশালী ঝড়ের প্রভাবে অবরুদ্ধ অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। প্লাবিত তাঁবুতে আটকা পড়া পরিবারগুলো সহায়তার জন্য মরিয়া হয়ে আবেদন জানাচ্ছে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ায় শত শত মানুষ শুকনো আশ্রয়ের খোঁজে তাদের অস্থায়ী বাসস্থান ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরা জানিয়েছে, স্থানীয় কর্মকর্তারা বুধবার সতর্ক করেছেন যে শুক্রবার পর্যন্ত ঝড়টি আকস্মিক বন্যা, তীব্র বাতাস ও শিলাবৃষ্টি ডেকে আনতে পারে। ইসরায়েলের দীর্ঘ দুই বছরের সামরিক অভিযান ও অবরোধের ফলে মানবিক সংকটে বিপর্যস্ত গাজায় এমন আবহাওয়া আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। বর্তমানে লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষ তাঁবু, অস্থায়ী কাঠামো কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে আশ্রয় নিয়ে আছে।
মানবিক সহায়তাকর্মীরা জানান, তাঁবু মেরামত, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ঠিক রাখতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম গাজায় প্রবেশে ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞার কারণে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার প্রস্তুতি খুবই দুর্বল। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন—নেতানিয়াহু সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে জরুরি ত্রাণসামগ্রী প্রবেশের অনুমতি নিশ্চিত করতে।
দক্ষিণ গাজার রাফা শহরে ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানায়, প্রবল বৃষ্টিতে প্লাবিত ক্যাম্পগুলো থেকে তারা অসংখ্য জরুরি কল পেয়েছে। অনেক পরিবার অভিযোগ করেছে, তাঁবুতে পানি ঢুকে তারা ভেতরেই আটকা পড়ে গেছে।
সংস্থাটি তাদের বার্তায় জানিয়েছে, সীমিত সম্পদ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব সত্ত্বেও তাদের দলগুলো নিরলসভাবে দুর্গতদের সহায়তায় কাজ করছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া এবং আল–জাজিরা যাচাই করা ফুটেজে দেখা যায়, ফিলিস্তিনিরা প্রবল বর্ষণে তাঁবু রক্ষায় আশপাশে কোদাল দিয়ে নালা খুঁড়ছে।
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় কার্যালয় (ওসিএইচএ) জানায়, বাস্তুচ্যুতদের জন্য প্রতিষ্ঠিত ৭৬১টি আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা প্রায় সাড়ে ৮ লাখ মানুষ বন্যার সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এর আগের ঝড়গুলোতে ২০০টিরও বেশি স্থানে বন্যা দেখা দিয়েছিল, যা ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষকে। তখন অনেক আশ্রয়কেন্দ্র পয়ঃনিষ্কাশন ও কঠিন বর্জ্যে দূষিত হয়ে পড়েছিল, বহু তাঁবু ভেসে গিয়েছিল এবং মানুষকে আবারও নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল।
গাজা শহর থেকে আল–জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজ্জুম জানান, জাতিসংঘ ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সতর্ক করেছে যে প্রবল বৃষ্টিপাত গাজার মানুষের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। শুষ্ক, উন্মুক্ত স্থানে তৈরি বাস্তুচ্যুতদের ক্যাম্পগুলো বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি বলেন, মানুষের ব্যবহৃত তাঁবুগুলো প্রায়ই দুর্বল ও ছেঁড়া, যা প্রচণ্ড বৃষ্টিতে কার্যত কোনো সুরক্ষাই দিতে পারে না। ফলে এই বর্ষণে বাস্তুচ্যুত পরিবারের অবশিষ্ট সামান্য সম্পদও মারাত্মকভাবে ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।
What's Your Reaction?
অন্তর্জাতিক ডেস্কঃ