বড়দিনের আগেই শান্তিচুক্তি: জেলেনস্কিকে ট্রাম্পের কঠোর ‘আল্টিমেটাম’

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
Dec 10, 2025 - 14:00
 0  5
বড়দিনের আগেই শান্তিচুক্তি: জেলেনস্কিকে ট্রাম্পের কঠোর ‘আল্টিমেটাম’
ট্রাম্প জেলেনস্কিকে বলেছেন, বর্তমান রণক্ষেত্র অনুসারেই যুদ্ধবিরতিতে যেতে। ছবিতে, হালকা গোলাপী রঙে চিহ্নিত অঞ্চলটি রাশিয়া দখলে যাওয়া ইউক্রেনীয় অঞ্চল। ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে এবার কঠোর সময়সীমা বেঁধে দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ২৫ ডিসেম্বর, অর্থাৎ বড়দিনের আগেই তিনি একটি শান্তি চুক্তিতে পৌঁছাতে চান। এই লক্ষ্যে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে মার্কিন প্রস্তাবিত শান্তিচুক্তি মেনে নেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময়ও বেঁধে দিয়েছেন তিনি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর এই তথ্য।

প্রস্তাব মেনে নিতে কয়েক দিনের সময়সীমা
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, মার্কিন আলোচকেরা ইউক্রেনীয় নেতৃত্বকে এই শান্তি প্রস্তাবের জবাব দেওয়ার জন্য মাত্র কয়েক দিন সময় দিয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবিত এই খসড়ায় বলা হয়েছে, কিয়েভকে কিছু ‘অনির্দিষ্ট নিরাপত্তা নিশ্চয়তার’ বিনিময়ে রাশিয়ার দখলে থাকা ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে হবে।

কর্মকর্তারা জানান, ট্রাম্প চাইছেন বড়দিনের উৎসবের আগেই যুদ্ধের ইতি টানতে। তবে জেলেনস্কি মার্কিন দূতদের জানিয়েছেন, এতো বড় সিদ্ধান্তের জন্য কিয়েভের ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে পরামর্শ করতে তাঁর কিছুটা সময়ের প্রয়োজন।

চাপের মুখে জেলেনস্কি
যদিও ট্রাম্প প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের বলেছেন যে চুক্তির জন্য তাঁর কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই, তবে পর্দার আড়ালে ঘটনা ভিন্ন। এর আগে তিনি নভেম্বরেই এক শান্তি পরিকল্পনা উত্থাপন করেছিলেন, যেখানে ইউক্রেনকে দনবাস থেকে সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছিল—যা ছিল যুদ্ধবিরতির জন্য মস্কোর অন্যতম প্রধান শর্ত।

গত সোমবার লন্ডন সফরকালে জেলেনস্কি স্বীকার করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে ‘একটি বড় ধরনের বাধার’ মুখে ঠেলে দিচ্ছে। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়া নিয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত চুক্তি হয়নি এবং লড়াই না করে ইউক্রেন কোনো জমি ছাড়তে রাজি নয়।

রণাঙ্গনে কোণঠাসা ইউক্রেন
শান্তিচুক্তির এই চাপের মধ্যেই রণাঙ্গনে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি ইউক্রেন। রুশ বাহিনী ফ্রন্ট লাইনের বিভিন্ন অংশে নিজেদের অবস্থান শক্ত করে ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছে। ডিসেম্বরের শুরুতেই রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ক্রাসনোয়ার্মেইস্ক (পোকরোভস্ক) শহর দখলের ঘোষণা দেয়। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই শহরটিকে পরবর্তী আক্রমণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ‘সেতুবন্ধন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। অন্যদিকে, ইউক্রেনীয় কমান্ডাররা জানাচ্ছেন, তাঁদের কাছে পর্যাপ্ত অস্ত্র নেই এবং নতুন করে সেনা নিয়োগ দিয়ে যুদ্ধের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

সেনা পলায়নে ধুঁকছে বাহিনী
যুদ্ধের ময়দানে অস্ত্র সংকটের পাশাপাশি ভয়াবহ সেনা সংকটে ভুগছে ইউক্রেন। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ সেনা অনুমতি ছাড়াই অনুপস্থিত অথবা পালিয়ে গেছেন।

গত অক্টোবরে ইউক্রেনীয় কৌঁসুলিরা জানিয়েছিলেন, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে প্রায় ২ লাখ ৩৫ হাজার সেনা অনুমতি ছাড়া অনুপস্থিত এবং প্রায় ৫৪ হাজার সেনা পলাতক রয়েছেন। পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত—এই এক বছরের মধ্যেই ১ লাখ ৭৬ হাজার সেনা অনুপস্থিত এবং ২৫ হাজার পলায়নের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে।

এমতাবস্থায় ট্রাম্পের এই আল্টিমেটাম ইউক্রেনকে অস্তিত্ব রক্ষার কঠিন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড় করিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow