‘বাইরে থেকে কেউ টের পেত না’: শারীরিক নির্যাতনের বীভৎস অভিজ্ঞতা

বিনোদন ডেস্কঃ
Dec 10, 2025 - 13:07
Dec 10, 2025 - 13:20
 0  8
‘বাইরে থেকে কেউ টের পেত না’: শারীরিক নির্যাতনের বীভৎস অভিজ্ঞতা
রতি অগ্নিহোত্রী। আইএমডিবি

রুপালি পর্দার জৌলুস ছেড়ে ভালোবাসার টানে সংসার জীবনে মনোনিবেশ করেছিলেন অভিনেত্রী রতি অগ্নিহোত্রী। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তই তাঁকে ঠেলে দেয় প্রায় তিন দশকের এক দুঃসহ দাম্পত্য জীবনের অন্ধকারে। তাঁর স্বামী, স্থপতি অনিল বিরওয়ানির সঙ্গে তাঁর আপাত 'সুখী' সংসারের আড়ালে দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে চলেছিল শারীরিক নির্যাতন।

কে এই রতি?

১৯৮০-এর দশকে ‘এক দুজে কে লিয়ে’ ও ‘কুলি’র মতো হিট ছবির সুবাদে রতি ছিলেন তৎকালীন বলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় মুখ। ক্যারিয়ারের শিখরে থাকতেই, ১৯৮৫ সালে স্থপতি অনিল বিরওয়ানিকে বিয়ে করে তিনি চলচ্চিত্রজীবন থেকে দূরে সরে যান। বাইরে থেকে তাঁদের সম্পর্ককে সুখের সংসার মনে হলেও, ভেতরের বাস্তবতা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।

নীরবে চলত নির্যাতন

বহু বছর পর এক আবেগঘন সাক্ষাৎকারে রতি জানান, বিয়ের শুরুর দিক থেকেই তাঁর উপর শারীরিক নির্যাতন শুরু হয়েছিল। প্রায় ৩০ বছর ধরে তিনি সেই নির্যাতন সহ্য করেছেন—হাসিমুখে, নিখুঁত জনসমক্ষে ইমেজের আড়ালে।

এত কিছু সহ্য করেও কেন তিনি থেকে গিয়েছিলেন? রতি জানান, তাঁর থাকার দুটি মূল কারণ ছিল—প্রথমত, বিবাহবন্ধনের পবিত্রতায় তাঁর বিশ্বাস; এবং দ্বিতীয়ত, বিয়ের এক বছরের মধ্যেই ছেলে তনুজ বিরওয়ানির জন্ম।

রতি অগ্নিহোত্রী। আইএমডিবি
রতি অগ্নিহোত্রী। আইএমডিবি

ছেলের ভবিষ্যৎকে অগ্রাধিকার দিয়ে রতি বারবার নিজেকে বুঝিয়েছেন যে একদিন না একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। তিনি আরও জানান, নির্যাতনের বেশির ভাগ আঘাতই এমন জায়গায় করা হতো, যাতে চোট বা দাগ বাইরে থেকে দেখা না যায়; এতে ‘সুখী পরিবার’-এর ভান বজায় রাখতে সুবিধা হতো।

শেষ পর্যন্ত বেরিয়ে আসা

২০১৫ সালের ৭ মার্চ পরিস্থিতি নাটকীয় মোড় নেয়। সেদিন তাঁদের ছেলে তনুজ ছিলেন পুনেতে শুটিংয়ে। হঠাৎই এক সহিংস ঘটনার পর ৫৪ বছর বয়সী রতি বুঝে যান, ঘুরে দাঁড়ানোর সময় এসেছে।

সিনেমার পোস্টারে মিঠূন চক্রবর্তীর সঙ্গে রতি অগ্নিহোত্রী। আইএমডিবি

সিনেমার পোস্টারে মিঠূন চক্রবর্তীর সঙ্গে রতি অগ্নিহোত্রী। আইএমডিবি

তিনি বলেন, "ভাবলাম, বয়স বাড়বে, শরীর দুর্বল হবে, একদিন এটি আমাকে মেরে ফেলবে।" এই ঘটনার এক সপ্তাহ পর তিনি একা পুলিশ স্টেশনে গিয়ে সাহস সঞ্চয় করে প্রথমবারের মতো স্বামীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করেন।

ছেলের প্রতিক্রিয়া ও নতুন শুরু

মা যে এত বছর ধরে এমন অবস্থার মধ্যে ছিলেন, তা জানতে পেরে তনুজ তাঁকে সম্পূর্ণ সমর্থন জানান। মায়ের পাশে থাকতে তিনি সরে আসেন ওরলির ফ্ল্যাট থেকে। পরে তিনি মা–বাবার সম্পর্ক মেরামতের চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু রতি আর কখনোই ওরলির সেই বাসায় ফিরে যাননি। নতুন জীবন শুরু করার জন্য তিনি চলে যান তাঁর লোনাভালার বাংলোতে।

রতি অগ্নিহোত্রী। আইএমডিবি

রতি অগ্নিহোত্রী। আইএমডিবি

বর্তমানে কোথায় রয়েছেন রতি?

হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অভিনেত্রী রতি অগ্নিহোত্রী এখন বেশির ভাগ সময় কাটান পোল্যান্ডে। সেখানে তিনি বোন অনিতার সঙ্গে মিলে একটি রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করেন। অন্যদিকে ছেলে তনুজ বিরওয়ানি ভারতের বিনোদনজগতে নিজের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow