বাড়ির পাশেই সবজি ক্ষেতে মিলল বৃদ্ধের রক্তাক্ত লাশ

সকালের শান্ত পরিবেশ ভেদ করে ভেসে এল এক নারীর আর্তচিৎকার। সেই চিৎকারের সূত্র ধরে প্রতিবেশীরা ছুটে গিয়ে যা দেখলেন, তার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না কেউই। বাড়ির মাত্র একশ গজ দূরে নিজেদের সবজি ক্ষেতেই পড়ে আছে আয়নাল হক নামের এক বৃদ্ধের রক্তাক্ত নিথর দেহ। শনিবার রাত থেকে নিখোঁজ এই বৃদ্ধের এমন মর্মান্তিক পরিণতিতে পুরো এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া ও আতঙ্ক। এটি কি নিছকই কোনো দুর্ঘটনা, নাকি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড? এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার আটপাড়া গ্রামে।
রবিবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার আটপাড়া ইউনিয়নের পূর্ব-আটপাড়ার অনিল মার্কেট এলাকা থেকে আয়নাল হকের লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি ওই এলাকারই বাসিন্দা মো. দুখাই’র ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার রাত ৮টার দিকে প্রতিদিনের মতোই বাড়ি থেকে বের হন আয়নাল হক। কিন্তু এরপর আর তিনি বাড়ি ফেরেননি। রাত গভীর হলে পরিবারের সদস্যরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তাকে সম্ভাব্য সব জায়গায়, এমনকি স্থানীয় বাজারেও খোঁজাখুঁজি করা হয়, কিন্তু কোনো সন্ধান মেলেনি।
রাতের অনিশ্চয়তা শেষে ভোরের আলো ফুটতেই ঘটে মর্মান্তিক সেই ঘটনা। রবিবার সকাল ৭টার দিকে তার স্ত্রী সাহিদা বেগম বাড়ি থেকে প্রায় ১০০ গজ দক্ষিণে নিজেদের সবজি ক্ষেতের দিকে যেতেই স্বামীকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেন। তার চিৎকারে এলাকাবাসী ছুটে এসে দেখতে পান, আয়নাল হকের নিথর দেহ পড়ে আছে। তার এক হাতের কব্জি এবং অন্য হাতের বাহুতে ধারালো অস্ত্রের ক্ষতচিহ্ন দেখা যাচ্ছিল, যা ঘটনাটিকে আরও রহস্যময় করে তোলে।
এই মৃত্যুকে ঘিরে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। নিহতের স্ত্রী সাহিদা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, তার স্বামীর কোনো শত্রু ছিল না এবং তাদের দাম্পত্য সম্পর্কও খুব ভালো ছিল। তিনি বলেন, “কারা আমার নিরীহ স্বামীটাকে এভাবে মারল, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।”
তবে, তার এই দাবির ঠিক বিপরীত একটি তথ্যও সামনে এসেছে। একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, আয়নাল হকের দুই ছেলেই প্রবাসী। বাড়িতে তিনি তার স্ত্রী ও দুই ছেলের স্ত্রীদের সঙ্গে থাকতেন। সম্প্রতি পুত্রবধূদের সঙ্গে তার সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটেছিল এবং এ নিয়ে বাড়িতে প্রায়শই ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকত। এই পারিবারিক কলহই তার মৃত্যুর কারণ কি না, সে প্রশ্নটি এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।
খবর পেয়ে শ্রীনগর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে। শ্রীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ নাজমুল হুদা খান জানান, “আমরা লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছি। লাশের শরীরে একাধিক ক্ষত রয়েছে। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার আগে নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না এটি হত্যাকাণ্ড কি না। আমরা সবদিক খতিয়ে দেখছি এবং আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”
আপাতদৃষ্টিতে শত্রুহীন একজন বৃদ্ধের এমন রক্তাক্ত পরিণতিতে হতবাক এলাকাবাসী। এটি কি পারিবারিক কলহের নির্মম শিকার, নাকি এর পেছনে রয়েছে অন্য কোনো অজানা শত্রুতার গল্প—সেই রহস্যের জট খুলতে এখন পুলিশের তদন্ত এবং ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষায় সবাই।
What's Your Reaction?






