মাগুরায় প্রকৃতির উপহার বেতফল: সুস্বাদু, পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যবর্ধক
বর্ষার পর প্রকৃতি যখন স্নিগ্ধ রূপে ঘরে ফেরে, তখন মাগুরার মহম্মদপুরের গ্রামগুলোতে মানুষের মুখে মুখে ফেরে প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন এক পরিচিত ফল—বেতফল। প্রাকৃতির এই অনন্য উপহার শুধু স্বাদেই নয়, পুষ্টি ও স্বাস্থ্যগুণেও সমৃদ্ধ।
গ্রামের ছোট-বড় সবাই বছরের এই সময়টির অপেক্ষায় থাকে। আষাঢ় থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত পরিপক্ক হয় বেতফল। নদীর তীরবর্তী আর্দ্র মাটি, পর্যাপ্ত সূর্যালোক এবং নিয়মিত বৃষ্টিপাত এ ফলের বৃদ্ধির জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে। স্থানীয় কৃষকদের মতে—বৃষ্টির পরপরই বেতফলের স্বাদ সবচেয়ে মিষ্টি হয়।
বেতফল প্রাচীনকাল থেকেই খাদ্য ও প্রাকৃতিক চিকিৎসার অংশ। গ্রামের বয়স্কদের ভাষায়, বেতফলের রস শরীরকে হালকা করে, মনকে শান্ত করে। এতে রয়েছে প্রাকৃতিক শর্করা, ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ফাইবার, যা হজমশক্তি বাড়ায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখে, ত্বক ও চুলকে সতেজ করে এবং শরীরের পানিশূন্যতা দূর করে।
গ্রামের শিশুদের কাছে বেতফল আনন্দের আরেক নাম। বড় গাছের ছায়ায় বসে বেতফল খেতে খেতে হাসিতে মুখ ভরে ওঠে তাদের। কৃষকদের মতে, এই ফল শুধু খাবার নয়, গ্রামীণ জীবনের স্মৃতি, ঐতিহ্য ও স্বাস্থ্যের সাথী।
দুপুরের তীব্র রোদে ছায়ায় বসে সোনালি খোসা ফেটে বের হওয়া রসালো অংশ মুখে দিলে মনে হয় প্রকৃতি যেন তার গল্প শোনাচ্ছে। বেতফলের রসে লুকিয়ে থাকে বর্ষার স্মৃতি, নদীমাতৃক গ্রামের মাঠের কোলাহল এবং প্রকৃতির অনাবিল সৌন্দর্য।
বর্ষা শেষে শুষ্ক মৌসুমে বা শীতেও বেতফল গ্রামীণ মানুষের প্রিয় খাদ্য হিসেবে পরিচিত। গ্রামের পথ ধরে হাঁটলে দেখা যায়—শিশুরা ছায়ার তলে বসে বেতফলের রস মুখে নিয়ে উচ্ছ্বাসে ভরে উঠছে।
সব মিলিয়ে বেতফল শুধু একটি মৌসুমি ফল নয়; এটি গ্রামের মানুষের আনন্দ, স্বাস্থ্যরক্ষক এবং প্রাকৃতিক ঔষধ—প্রকৃতির এক অতুলনীয় উপহার।
What's Your Reaction?
বিশ্বজিৎ সিংহ রায়, ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি, মাগুরাঃ