জলের বুকে ফুটেছে শাপলার শুভ্র কাব্য

জাকির হোসেন, স্টাফ রিপোর্টারঃ
Aug 31, 2025 - 16:02
 0  4
জলের বুকে ফুটেছে শাপলার শুভ্র কাব্য

সবুজ পাতার গালিচার ওপর ফুটে আছে অজস্র সাদা শাপলা, যেন শান্ত জলের বুকে কেউ বিছিয়ে দিয়েছে শুভ্রতার চাদর। দখিনা বাতাসে দুলছে প্রতিটি ফুল, আর সেই দোলানিতেই মুগ্ধ হচ্ছে শত শত চোখ। এটি কোনো কল্পনার দৃশ্য নয়, ফরিদপুরের সালথা উপজেলার খোয়াড় গ্রামের জলাশয়গুলো এখন সেজেছে এমনই নয়নাভিরাম রূপে।

বর্ষার এই অনবদ্য সৌন্দর্য উপভোগ করতে এবং ক্যামেরাবন্দী করতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন নারী-পুরুষ ও তরুণ-তরুণীরা। নৌকায় চড়ে শাপলার রাজ্যে ভেসে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা নিতে ভিড় করছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। শাপলার কোমল স্পর্শ আর সরল সৌন্দর্যের মাঝে তারা খুঁজে নিচ্ছেন গ্রামীণ জীবনের নিঃশব্দ কাব্য।

সম্প্রতি সরেজমিনে উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের খোয়াড় গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশেই বিস্তীর্ণ জলাশয় জুড়ে সাদা শাপলার মেলা। সকাল ও বিকেলে মানুষের আনাগোনা বাড়ে সবচেয়ে বেশি। গ্রামের বাসিন্দা হেমায়েত ফকির এই সৌন্দর্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, "মায়াময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর আমার এই 'খোঁয়াড় গ্রাম'। বর্ষা এলে জাতীয় ফুল শাপলা এর সৌন্দর্য বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। শাপলার সাদা রং যেমন আমাদের গ্রামের সহজ-সরল মানুষের পরিশুদ্ধ আত্মার প্রতীক, তেমনি এর পাপড়িগুলোর মতোই সুন্দর তাদের মন। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে এই গ্রামটি ভ্রমণপিপাসুদের তীর্থস্থান হয়ে উঠতে পারে।"

গ্রামের আরেক বাসিন্দা মাফিকুল ইসলামের কথায় উঠে আসে এক কাব্যিক বর্ণনা, "মনে হয়, আকাশের তারারা যেন খসে পড়েছে জলের ওপর। এই বিপুল জলরাশির মাঝে ফুটে থাকা শাপলা দেখলে মন ভরে যায়। এখানে শুধু মাটি নয়, বর্ষায় হৃদয়ও জেগে ওঠে।" তিনি আরও জানান, শাপলার সৌন্দর্যের পাশাপাশি এখানে নানা প্রজাতির পাখির কোলাহল আর দেশি মাছের আনাগোনা পরিবেশকে আরও মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে।

এই শাপলার বিল কেবল সৌন্দর্যের আঁধার নয়, এটি স্থানীয় জীবনযাত্রার সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আবু মুসা নামের এক যুবক জানান, শুষ্ক মৌসুমে এই জমিতে পেঁয়াজ ও পাটের চাষ হয়। বর্ষায় প্রাকৃতিকভাবেই জন্মায় শাপলার গাছ।

স্থানীয়রা জানান, একসময় এই বিল থেকে শালুক (শাপলার মূল) তুলে সেদ্ধ করে খেয়ে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখন দিন বদলেছে, তবে অনেকেই শাপলার ডাঁটা সবজি হিসেবে রান্না করে খান। কিশোর-কিশোরীরা ছোট ডিঙি নৌকায় বিলজুড়ে ঘুরে শাপলা তোলে, যা এক গ্রামীণ ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি। মোস্তফা কামাল নামের একজন বলেন, "শুধু সৌন্দর্যই নয়, জাতীয় ফুল শাপলা আমাদের জীবিকারও সুযোগ সৃষ্টি করেছে।"

সালথা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুদর্শন শিকদার বলেন, "বর্ষা ও শরৎকালে উপজেলার খাল-বিলে প্রচুর শাপলা ফোটে। এটি পুষ্টিগুণেও ভরপুর। শাপলার ডাঁটায় ভিটামিন, খনিজ ও আঁশ রয়েছে। এছাড়া এর বীজ থেকে খই তৈরি হয়, যা বাংলায় বেশ জনপ্রিয়।"

ফরিদপুর শহর থেকে বাস বা অটোযোগে বালিয়াগট্টি বাজারে নামতে হবে, যার দূরত্ব প্রায় ৮-১০ কিলোমিটার। সেখান থেকে অটোরিকশা বা ভ্যানে সহজেই পৌঁছানো যাবে খোয়াড় গ্রামের এই শাপলার রাজ্যে। এক শান্ত, স্নিগ্ধ দুপুরে এই শাপলার সৌন্দর্য আপনার মানসিক প্রশান্তির কারণ হতে পারে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow