নদী রক্ষায় আলীকদমের তামাক বিরোধী অভিযান: বিকল্প চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা
বান্দরবানের আলীকদমে পরিবেশ বিধ্বংসী তামাক চাষ বন্ধ এবং মাতামুহুরী নদীর তীর রক্ষায় এক বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে স্থানীয় প্রশাসন। উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ যৌথভাবে নদীর তীরবর্তী সরকারি খাস জমিতে তামাক চাষে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এই পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য হলো নদীর ভাঙন রোধ, মাটির উর্বরতা রক্ষা এবং জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা।
এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে উপজেলা তথ্য অফিসের মাধ্যমে মাতামুহুরী ও এর উপনদীগুলোর তীরবর্তী এলাকায় নিয়মিত মাইকিং করে কৃষকদের সরকারি নির্দেশনা সম্পর্কে অবহিত করা হচ্ছে। নির্দেশনা অনুযায়ী, নদীর তীর থেকে উভয় পাশে ৫০ ফুট পর্যন্ত সরকারি খাস জমিতে তামাক চাষ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
একইসাথে, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এবং কৃষি কর্মকর্তা সরেজমিনে এসব এলাকা পরিদর্শন করে কৃষকদের সাথে সরাসরি কথা বলছেন। তারা তামাক চাষের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে এর পরিবর্তে ভুট্টা, বাদাম, বিভিন্ন জাতের সবজি ও ডাল জাতীয় শস্য চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করছেন। পরিবেশবান্ধব ফসল চাষের জন্য কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও অন্যান্য প্রণোদনাও বিতরণ করা হচ্ছে।
আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এ বিষয়ে বলেন, "নদীর পাড় সরকারি সম্পত্তি এবং এটি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অপরিহার্য। তামাক চাষের কারণে নদীর ভাঙন বাড়ছে এবং এর জন্য ব্যবহৃত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক মাটি ও জলজ পরিবেশকে মারাত্মকভাবে দূষিত করছে। আমরা সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করেছি। এই নির্দেশনা অমান্য করে কেউ নদীর ধারে বা ঝিরির আশেপাশে তামাক চাষ করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"
উপজেলা কৃষি অফিসার বলেন, "আমরা কৃষকদের তামাক চাষের স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং জমির উর্বরতা হ্রাসের বিষয়ে সচেতন করছি। বিকল্প ফসল উৎপাদনে সব ধরনের সহায়তা ও প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। আশা করি, কৃষকরা পরিবেশবান্ধব চাষাবাদে ফিরে এসে নিজেদের ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুরক্ষা নিশ্চিত করবেন।"
সংশ্লিষ্টদের মতে, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় প্রশাসন, কৃষি বিভাগ এবং স্থানীয় জনগণের এই সমন্বিত প্রয়াস অত্যন্ত সময়োপযোগী। এই উদ্যোগ সফল হলে শুধু মাতামুহুরী নদীর ভাঙনই রোধ হবে না, বরং এলাকার কৃষি ব্যবস্থায় একটি ইতিবাচক ও টেকসই পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
What's Your Reaction?
আবু জুয়েল নুরখান, আলীকদম প্রতিনিধি, বান্দরবানঃ