চরাঞ্চলে শিক্ষা ব্যবস্থা হুমকির মুখে: যোগাযোগ সংকট ও অব্যবস্থাপনায় ব্যাহত পাঠদান
বর্ষায় নদীর উত্তাল ঢেউ, আর শুকনায় মাইলের পর মাইল ধু ধু বালুচর- এই দুই বাস্তবতার সঙ্গে যুদ্ধ করেই চলে ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার চরাঞ্চলের শিশুদের শিক্ষা জীবন। জ্ঞান অর্জনের এই দুর্গম পথে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে নাজুক যোগাযোগ ব্যবস্থা। এর ফলে বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অনিয়মিত হয়ে পড়েছে, ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক পাঠদান। এর সঙ্গে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে যুক্ত হয়েছে বিদ্যালয় ভবন ভাড়া দেওয়া ও সেখানে বহিরাগত শ্রমিকদের বসবাসের মতো গুরুতর অভিযোগ, যা চরের শিক্ষা ব্যবস্থাকে খাদের কিনারায় দাঁড় করিয়েছে।
এই অঞ্চলের শিক্ষকদের কণ্ঠেও ফুটে উঠেছে অসহায়ত্বের সুর। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রেজাউল ইসলাম বলেন, "চরাঞ্চল এলাকায় নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসা সত্যিই এক যুদ্ধ। বর্ষার সময় নদীর তীব্র স্রোত আর নৌকার অভাবে প্রতিদিন আসা-যাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। ফলে পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।"
একই রকম অভিজ্ঞতার কথা জানালেন বিশ্বনাথপুর আকনকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাইফুর রহমান। তিনি বলেন, "যোগাযোগ ব্যবস্থা এতটাই খারাপ যে, অনেক সময় নৌকা না পেলে সারাদিন অপেক্ষা করেও স্কুলে পৌঁছানো যায় না। এই অনিশ্চয়তার কারণেই বাধ্য হয়ে অনেক দিন আমরা দুপুরের পরই স্কুল ছুটি দিয়ে দেই, যাতে শিক্ষকরা নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন।" এই পরিস্থিতির কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে এবং ঝরে পড়ার হার বাড়ছে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
যোগাযোগ সংকটের পাশাপাশি বিদ্যালয় ভাড়া দেওয়া ও সেখানে শ্রমিকদের বসবাসের মতো গুরুতর অভিযোগ শিক্ষার পরিবেশকে আরও কলুষিত করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিভাবক জানান, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন কর্মকাণ্ডে তারা হতাশ ও ক্ষুব্ধ।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সদরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ মামুনুর রহমান জানান, "বিদ্যালয় ভাড়া দেওয়া বা সেখানে শ্রমিকদের থাকার বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। অভিযোগটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে তদন্তের জন্য ইতোমধ্যে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"
এলাকাবাসী ও শিক্ষকরা আশা করছেন, তদন্ত কমিটির দ্রুত পদক্ষেপ এবং যথাযথ ব্যবস্থার মাধ্যমে চরাঞ্চলের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠদানের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসবে এবং কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত হবে।
What's Your Reaction?
নুরুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টারঃ