দেড় বছর ধরে বিদ্যুৎহীন ফরিদপুরের সদরপুরের দুর্গম চরাঞ্চল
ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার পদ্মা নদীবেষ্টিত দুর্গম দুই ইউনিয়ন—দিয়ারা নারিকেলবাড়িয়া ও চর নাছিরপুর। দীর্ঘ দেড় বছর ধরে এই দুই ইউনিয়নের প্রায় দুই হাজার পরিবার অন্ধকারে দিন কাটাচ্ছেন। সাবমেরিন ক্যাবল ছিঁড়ে যাওয়ার পর থেকে পুরো এলাকাজুড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এতে দৈনন্দিন জীবন, শিক্ষাসহ ছোট-বড় সব কর্মকাণ্ডে নেমে আসে অচলাবস্থা।
মোজাফফরপুর গ্রামের বাসিন্দা রাজা মল্লিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বিদ্যুতের অভাবে ফ্রিজ, পাখা, টেলিভিশন কিছুই ব্যবহার করা যায় না। মাছ-মাংস সংরক্ষণ করা যায় না। গরমে ছোট বাচ্চা আর বৃদ্ধদের কষ্ট দেখলে চোখ ভিজে আসে।’
একই গ্রামের বাসিন্দা জাকির হোসেন জানান,
‘রাতে শিশুরা পড়তে পারে না। মোবাইল চার্জ দিতে নদী পাড়ি দিয়ে অন্য ইউনিয়নে যেতে হয়। দেড় বছর ধরে জীবন যেন অচল হয়ে আছে।’
স্থানীয়রা জানান, গত বছর পদ্মার তীব্র স্রোতে চরাঞ্চলের সাবমেরিন ক্যাবল ছিঁড়ে যায়। এরপর থেকেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ। বহুবার অভিযোগ করেও মেলেনি স্থায়ী সমাধান। শিক্ষার্থী, কৃষক, ব্যবসায়ীসহ সব শ্রেণির মানুষ চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন।
দিয়ারা নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘বিদ্যুৎ না থাকায় শুধু সাধারণ মানুষ নয়, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। দোকানে ফ্রিজ, লাইট বা ফ্যান চালাতে না পারায় ব্যবসা প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নিয়মিত বিদ্যুৎ বিভাগে যোগাযোগ করছি। আশা করি দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে।’
ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি–২-এর সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মো. সাখাওয়াত হোসেন জানান,
‘ইউনিয়ন দুটি নদীবেষ্টিত হওয়ায় লাইন রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত কঠিন। ক্যাবল মেরামত ও নতুন লাইন বসাতে সময় এবং বাজেট—দুটোর প্রয়োজন আছে।’
এ বিষয়ে সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সেবা নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, শিগগিরই ক্যাবল মেরামতের কাজ শুরু হবে।’
দীর্ঘ ভোগান্তির অবসান ঘটিয়ে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
What's Your Reaction?
নুরুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টারঃ