জ্ঞানের আলো আর প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে আলফাডাঙ্গার প্রাথমিক শিক্ষা

এক হাতে নতুন খাতা-কলম, অন্য হাতে রঙিন ছাতা; চোখেমুখে বাঁধভাঙা উল্লাস। আর শ্রেণিকক্ষে জ্বলে উঠেছে আধুনিক শিক্ষার আলো—একটি ঝকঝকে স্মার্ট টিভি। এটি কোনো শহুরে আধুনিক স্কুলের চিত্র নয়, ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আজকের বাস্তব দৃশ্য। উপজেলা প্রশাসনের এক মানবিক ও ব্যতিক্রমী উদ্যোগে মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) দিনটি সেখানকার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য হয়ে উঠেছিল এক অবিস্মরণীয় উৎসব
সকাল ১১টায় আলফাডাঙ্গা উপজেলার দরুণা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ ছিল শিশুদের কলরবে মুখরিত। সেখানকার ৬৮ জন ছাত্রছাত্রীর হাতে খাতা, কলম, ফোল্ডারের পাশাপাশি তুলে দেওয়া হয় একটি করে ছাতা। তীব্র রোদ বা আকস্মিক বৃষ্টিতে স্কুলে আসার কষ্ট লাঘব হবে ভেবে ছাতা হাতে পেয়ে শিশুদের আনন্দ ছিল চোখে পড়ার মতো।
এই মহতী আয়োজনের প্রধান অতিথি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল ইকবাল বলেন, “শিশুরাই আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ। তাদের শিক্ষাজীবন নির্বিঘ্ন করতে আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। ছাতা পেয়ে ওদের মুখে যে নির্মল হাসি ফুটে উঠেছে, তা আমাদের সব ক্লান্তি দূর করে দেয়। আমরা চাই, প্রতিটি শিশু যেন কোনো বাধা ছাড়াই হাসিমুখে স্কুলে আসে।”
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তহমিনা খানুম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, “ইউএনও স্যারের এই মহৎ উদ্যোগ আমাদের শিক্ষকদের জন্যেও বড় অনুপ্রেরণা। নতুন শিক্ষা উপকরণ পেয়ে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় আরও মনোযোগী হবে।
একই দিনে দুপুরে উপজেলার ইকরাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উন্মোচিত হয় শিক্ষার আরেক নতুন দিগন্ত। দুপুর ১টায় বিদ্যালয়টিতে একটি ৪৩ ইঞ্চি স্মার্ট টেলিভিশন স্থাপন করা হয়। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা এখন থেকে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের মাধ্যমে পাঠ্যবইয়ের বাইরেও বিশাল জগৎ সম্পর্কে জানতে পারবে। একই সাথে, বিদ্যালয়ের ২০ জন অসচ্ছল শিক্ষার্থীর মাঝে বিতরণ করা হয় নতুন স্কুল ড্রেস ও কেডস।
ইউএনও রাসেল ইকবাল বলেন, “ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে শিশুদের শৈশব থেকেই প্রযুক্তির সাথে পরিচিত করাতে হবে। এই স্মার্ট টিভির মাধ্যমে তারা আনন্দদায়ক উপায়ে শিখবে এবং বিশ্ব সম্পর্কে জানবে।”
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহা. রফিকুল ইসলাম বলেন, “স্মার্ট টিভি ও স্কুল ড্রেস বিতরণের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। এটি শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ করবে এবং শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়াবে।”
নতুন স্কুল ড্রেস ও কেডস পেয়ে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র সোহেল উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে, “নতুন জুতো পরে এখন বন্ধুদের সাথে দৌড়াতে খুব মজা লাগবে।”
এই দুটি উদ্যোগকে সফল করতে আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাগর হোসেন সৈকত ও উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সরওয়ার হোসেনসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। উপজেলা প্রশাসনের এই পদক্ষেপে শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অভিভাবক সকলের মধ্যেই এক নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে।
What's Your Reaction?






