নান্দাইলের সিংরইল রাস্তায় দীর্ঘ ৩০ বছরেও উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি

এক প্রজন্ম পেরিয়ে আরেক প্রজন্মের আগমন, কিন্তু বদলায়নি রাস্তার চিত্র। জন্মের পর থেকে যে মাটির রাস্তা দেখে এসেছেন, বয়সের ভাঁজে চামড়া পড়লেও সে রাস্তা রয়ে গেছে আগের মতোই। এটি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার ৮নং সিংরইল ইউনিয়নের হরিপুর রতনবাজার থেকে বগরীকান্দা পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার সড়কের এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি, যা দীর্ঘ ৩০ বছরেও কোনো উন্নয়নের মুখ দেখেনি। বর্ষা মৌসুমে এই রাস্তাটি যেন হয়ে ওঠে এলাকাবাসীর জন্য এক সীমাহীন দুর্ভোগের কারণ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রতিবার নির্বাচনের আগেই মেলে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি, কিন্তু নির্বাচন শেষে সব যেন হারিয়ে যায় বিস্মৃতির অতলে। এই একটি সড়কের কারণে ৪টি মসজিদ, মাদ্রাসা, প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং বেশ কয়েকটি মৎস্য ও মুরগীর খামারের সাথে যুক্ত হাজারো মানুষের জীবনযাত্রা থমকে আছে। বিশেষ করে বর্ষাকালে কাদা-পানিতে একাকার হয়ে যাওয়া রাস্তায় চলাচল করা শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী মানুষের জন্য এক দুঃস্বপ্নের নাম।
ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে মঞ্জুরুল ইসলাম নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আমার জন্মের পর থেকেই এই রাস্তার বেহাল দশা দেখে আসছি। কতজন যে আশ্বাস দিয়েছেন তার কোনো হিসাব নেই, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বৃষ্টির সময় কাদা ভেঙে চলাচল করতে গিয়ে আমাদের চরম বেগ পেতে হয়। কোনো উপায় না পেয়ে শেষে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে একটি লিখিত আবেদন করেছি। আমাদের একটাই দাবি, এই রাস্তাটি দ্রুত পাকা করা হোক।”
এই বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যেও রয়েছে মতবিরোধ। ৮নং সিংরইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: সাইফুল ইসলাম জানান, “রাস্তাটি এলজিইডির অধীনে। আগের এমপি সাহেব যেগুলোর অর্ডার দিয়েছিলেন, শুধু সেগুলোরই কাজ হয়েছে। আমি নিজে লেবার পাঠিয়েছিলাম মাটি কাটার জন্য, কিন্তু এলাকাবাসী কেউ মাটি দেয়নি।”
তবে চেয়ারম্যানের এই বক্তব্যকে ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন নূর-আলম নামের আরেক গ্রামবাসী। তিনি বলেন, “জনপ্রতিনিধিরা মাটি কাটা তো দূরের কথা, এই রাস্তায় এক টুকরো ইটও ফেলেনি। আমার বাড়ির সামনে এত কাদা, আমি মাটি ফেলতে দেবো না, এটা কোনো যুক্তির কথা? চেয়ারম্যান আমাদের পক্ষে থাকলে এমন কথা বলতেন না।”
এদিকে, নান্দাইল উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল মালেক বিশ্বাসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এই রাস্তাটি পাকা করার জন্য কোনো তথ্য চাওয়া হয়নি বা কোনো নির্দেশনাও তাদের কাছে আসেনি। তিনি বলেন, “আগের এমপির সময়ে অনুমোদিত কাজগুলো প্রায় শেষ। নতুন করে কোনো প্রকল্প এখনো অনুমোদন হয়নি। তবে আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি জানলাম, এখন থেকে আমাদের সুদৃষ্টি থাকবে।”
প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের এমন ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্যের মাঝে পড়ে সিংরইল ইউনিয়নের হাজারো মানুষ এখন তাকিয়ে আছে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে। তাদের একটাই প্রশ্ন- তাদের এই দুর্ভোগের শেষ কবে হবে?
What's Your Reaction?






