‘দল ছেড়েছি, রাজনীতি নয়’, আসল লড়াই কেবল শুরু - তাজনূভা জাবীন
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনূভা জাবীন দল থেকে পদত্যাগ এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। তবে দল ছাড়লেও তিনি রাজনীতি থেকে বিদায় নিচ্ছেন না বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন।
রোববার (২৮ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া পরপর দুটি স্ট্যাটাসে তিনি নিজের অবস্থান, পদত্যাগের কারণ এবং দলের বর্তমান নেতৃত্বের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলে ধরেন।
রোববার দুপুরের পর দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তাজনূভা জাবীন বলেন, ‘আমি এনসিপি ছেড়েছি, রাজনীতি না। সংসদ পর্যন্ত যাওয়ার জন্য যে লড়াইটা চালাতে হয়, এরা (এনসিপি নেতৃত্ব) তার কিছুই করেনি। লড়াই, সংগ্রাম ও মজলুমের পক্ষে থাকা ছাড়া সংসদে যাওয়া বা জনপ্রতিনিধি হওয়া টেকসই নয়। আমি টেকসই কিছু চাই।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, এই পদত্যাগের মধ্য দিয়ে তার আসল লড়াই শুরু হলো। তার ভাষ্যমতে, ‘আমার রাজনীতির শেষ না, এটা শুরু।’
এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দেওয়া এক দীর্ঘ স্ট্যাটাসে তাজনূভা এনসিপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর আসন সমঝোতা এবং দলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি অভিযোগ করেন, জামায়াতের সাথে এই জোট কোনো আকস্মিক রাজনৈতিক কৌশল নয়, বরং এটি একটি ‘সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র’।
তাজনূভা বলেন, ‘রাজনৈতিক কৌশলের নাম করে পুরো জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনাকে জামায়াতের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। এনসিপিকে শুরুতে জামায়াতের আরেকটি দোকান বলা হতো, এখন নিজেদের স্বকীয়তা বিসর্জন দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য দলটি জামায়াতকেই বেছে নিয়েছে।’
দলের মনোনয়ন প্রক্রিয়া নিয়ে তিনি বলেন, ‘সারাদেশ থেকে ১২৫ জনকে মনোনয়ন দেওয়ার ডাক দিয়ে শেষ পর্যন্ত মাত্র ৩০ জনের জন্য আসন সমঝোতা করা হয়েছে। বাকিদের নির্বাচন করতে না দিয়ে জামায়াতের পক্ষে প্রচারণা চালাতে বাধ্য করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।’ দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে ‘মাইনাস পলিটিক্স’-এর অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, বিশ্বাস ও আস্থার জায়গাটি পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হয়েছে।
তাজনূভা জাবীন অভিযোগ করেন, এনসিপি শুরুতে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’, মধ্যপন্থা এবং নারী ও বিভিন্ন জাতিসত্তাকে নিয়ে যে রাজনীতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, বর্তমান নেতৃত্ব তা থেকে সরে এসেছে। তিনি বলেন, ‘যারা এই সংসদ চায়নি, তারাই এখন এমপি হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। যারা জুলাইয়ের স্পিরিট ধারণ করত, তাদের কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এনসিপি স্বতন্ত্র স্বকীয়তা নিয়ে দাঁড়ালে ভবিষ্যতে যে কারো সাথে জোট হতে পারত। কিন্তু শুরুতেই সব অপশন বন্ধ করে দিয়ে জামায়াতের সাথে জোট ছাড়া আর কোনো উপায় রাখা হয়নি।’
পদত্যাগের পাশাপাশি আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার কথাও জানান তাজনূভা। অত্যন্ত ভারাক্রান্ত মনে তিনি লিখেন, ‘আজকেই আমার মা চট্টগ্রাম থেকে আমার নির্বাচনের জন্য ঢাকায় এসেছেন, আর আজকেই আমাকে এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হলো।’
সমর্থকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি ঘোষণা দেন, নির্বাচনের জন্য তিনি যেসব অনুদান বা ডোনেশন পেয়েছিলেন, তা পর্যায়ক্রমে সবাইকে ফেরত দেবেন।
শেষাংশে তিনি বলেন, আমৃত্যু দেশের গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের জন্য এবং মধ্যপন্থার বাংলাদেশপন্থী রাজনীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষে তার সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।
What's Your Reaction?
অনলাইন ডেস্কঃ