রক্তক্ষয়ী সংঘাত শেষে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্তে যুদ্ধবিরতি
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া তিন সপ্তাহের ভয়াবহ সীমান্ত সংঘাতের পর অবশেষে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। আজ শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা থেকে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের স্বাক্ষরিত একটি যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়, সীমান্তবর্তী একটি চেকপয়েন্টে টানা তিন দিন আলোচনার পর থাইল্যান্ডের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নাথফন নার্কফানিট এবং কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী চা সেইহা এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তিতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পরোক্ষ কূটনৈতিক সমর্থন ছিল বলে জানা গেছে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে বলা হয়েছে, উভয় পক্ষ বর্তমানে যে অবস্থানে রয়েছে সেখানেই অবস্থান করবে। কোনো পক্ষই নতুন করে সেনা মোতায়েন বা অগ্রসর হতে পারবে না। এছাড়া, সামরিক উদ্দেশ্যে একে অপরের আকাশসীমা লঙ্ঘন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মানবিক দিক বিবেচনায় সীমান্ত এলাকার বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের নিরাপদে নিজ বাড়িতে ফেরার সুযোগ দেওয়া এবং ল্যান্ডমাইন অপসারণে সহযোগিতার অঙ্গীকার করা হয়েছে। শর্ত অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি টানা ৭২ ঘণ্টা স্থায়ী হলে থাইল্যান্ড তাদের হাতে বন্দী ১৮ জন কম্বোডীয় সেনাকে মুক্তি দেবে।
গত জুলাই মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ‘কুয়ালালামপুর শান্তিচুক্তি’র মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যকার উত্তেজনা সাময়িকভাবে প্রশমিত হয়েছিল। তবে গত ৭ ডিসেম্বর সেই চুক্তি ভেঙে যাওয়ায় পরিস্থিতি নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
থাই কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, গত তিন সপ্তাহের সংঘাতে তাদের ২৬ জন সেনা এবং অন্তত ৪৫ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে, কম্বোডিয়া ৩১ জন বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করলেও সামরিক হতাহতের সঠিক সংখ্যা প্রকাশ করেনি। ভয়াবহ এই সংঘাতের ফলে সীমান্ত এলাকা থেকে প্রায় ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
সংঘাতে থাইল্যান্ড এফ-১৬ যুদ্ধবিমান থেকে হামলা ও ভারী কামানের গোলাবর্ষণ করে এবং জবাবে কম্বোডিয়া বিএম-২১ রকেট লঞ্চার ব্যবহার করে। সংঘাত চলাকালে সীমান্তে একটি প্রাচীন বিষ্ণু মূর্তি গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ভারত তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট ‘আসিয়ান’-এর একটি পর্যবেক্ষক দল শান্তি প্রক্রিয়া তদারকি করবে। থাইল্যান্ডের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এই যুদ্ধবিরতিকে কম্বোডিয়ার ‘সততার পরীক্ষা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘিত হলে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী থাইল্যান্ড আত্মরক্ষার কঠোর ব্যবস্থা নেবে।
তবে, এক শতাব্দী ধরে চলা এই সীমান্ত বিরোধের স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান শান্তিচুক্তি কতটা টেকসই হবে, তা নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে সংশয় রয়েই গেছে।
What's Your Reaction?
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ